গাজায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হওয়া নিয়ে ফের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আমেরিকার উত্থাপিত একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়। এরপর এই প্রস্তাবের জবাব দেয় হামাস। হামাসের জবাবটি পর্যালোচনা শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন জানিয়েছেন, হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে পাল্টা যেসব দাবি জানিয়েছে, সেগুলোর কিছু 'কাজ করবে', অর্থাৎ মানা যাবে। কিন্তু কিছু শর্ত মানা যাবে না। আর বিস্নংকেনের এমন মন্তব্যের পর যুদ্ধবিরতিটি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা
গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির পরিকল্পনায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হামাসের প্রস্তাবের পর আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন সংগঠনটির উদ্দেশে বলেছেন 'দরকষাকষি বন্ধের সময় এসেছে'। দোহায় সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, কিছু পরিবর্তন প্রস্তাব নিয়ে কাজ করা গেলেও অন্যগুলো নিয়ে কাজের সুযোগ নেই, তবে আমেরিকা এবং আলোচনার মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর 'চুক্তিটি করতে চেষ্টা করে যাবে'।
হামাস গত মঙ্গলবার বলেছে, তারা এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। তবে তারা গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিয়েছে। ইসরাইল সরকার এ নিয়ে মন্তব্য করেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রতিক্রিয়া প্রত্যাখ্যানের মতোই।
এদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে প্রস্তাবনা ১২ দিন আগেই দেওয়ার কথা বলেছেন, তা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো প্রকাশ্যে অনুমোদন করেননি। বিস্নংকেন অবশ্য বলেছেন, সোমবার জেরুজালেমে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু তার 'অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন'। ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদও ওই প্রস্তাবের সমর্থনে একটি রেজুলেশন পাস করেছে।
কাতারে এ সফরের মাধ্যমে বিস্নংকেন আঞ্চলিক সংকট সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আবদুর রহমান আল-থানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন হাসিমুখেই। দেশটি এই সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার কার্যালয় আছে সেখানে। আবার ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনারও একটি চ্যানেল আছে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিস্নংকেনকে কিছুটা উত্তেজিতও দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, আমেরিকা সমর্থিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস যেসব পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। হামাস যেসব প্রস্তাব গত ৬ মে দিয়েছিল, তার সঙ্গে এবারের প্রস্তাব প্রায় অভিন্ন। এর পেছনেই পুরো বিশ্ব আছে। ইসরাইলও তা গ্রহণ করেছে। এখন হামাস একটিই প্রতিক্রিয়া দিতে পারে এবং তা হলো- ইয়েস। এর পরিবর্তে হামাস দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করল এবং তারপর অনেকগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করল এবং এর কয়েকটি তারা আগেও গ্রহণ করেছে। এর ফলে হামাস যে যুদ্ধ শুরু করেছে, তা চলছে এবং আরও মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে। ফিলিস্তিনিরা দুর্ভোগে পড়বে, আরও ইসরাইলিরা দুর্ভোগে পড়বে।'
বিস্নংকেন অবশ্য হামাসের পরিবর্তনের দাবিগুলো নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। হামাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে 'গাজায় আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ' এবং ইসরাইলি সেনাদের পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক বু্যরোর একজন সদস্য ইজ্জাত আল-রিশক বলেছেন, তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল 'দায়িত্বশীল, গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক' এবং এটি সমঝোতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে 'বড় পথ' তৈরি করেছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করে একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হামাস প্রধান এবং তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়গুলো পরিবর্তন করেছে এবং জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, যেটি প্রেসিডেন্ট বাইডেন উপস্থাপন করেছিলেন।
বুধবার আরেক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, সমঝোতায় পৌঁছাতে তারা পুরোপুরি ইতিবাচক। এবং তারা ইসরাইলকে চাপ দেওয়ার জন্য বিস্নংকেনকে অনুরোধ করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটেও বিস্নংকেন বলেছেন, কাতার ও মিসরকে নিয়ে আমেরিকা চুক্তিটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে।