আবারও উত্তেজনা বাড়ছে কোরীয় উপদ্বীপে। কিছুদিন ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় আবর্জনা বোঝাই বেলুন পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া; পাল্টা হিসেবে সীমান্তে শক্তিশালী লাউডস্পিকার স্থাপন করেছে। এ নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেই রোববার উত্তর কোরিয়ার কিছু সেনা অল্প সময়ের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করলে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী গুলি ছুড়ে তাদের সতর্ক করেছে বলে সিউলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। দুই দেশকে পৃথক করা অসামরিকৃত জোনে (ডিএমজি) এ ঘটনা ঘটেছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ (জেসিএস) মঙ্গলবার জানায়, রোববার স্থানীয় সময় দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে উত্তর কোরিয়ার অনির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা ডিএমজির সামরিক সীমানারেখা অতিক্রম করে। জেসিএসের মুখপাত্র কর্নেল লি সং জুন জানান, সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত নয় বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। ডিএমজির ওই এলাকাটি ঘন বনে ঘেরা থাকায় সীমান্ত চিহ্নগুলো অস্পষ্ট হয়ে গেছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমাদের সামরিক বাহিনী সতর্ক করে সম্প্রচার এবং গুলি ছোড়ার পরপরই তারা উত্তর দিকে চলে যায়, সেখানে অস্বাভাবিক কোনো চলাচল লক্ষ্য করা যায়নি।'
দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা 'ইয়োনহাপ' এক অনামা জেসিএস কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ২০ থেকে ৩০ জন সেনা কুড়াল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বহন করছিল, তারা হারিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছিল।
গত কিছুদিন ধরে উত্তর কোরিয়া আবর্জনা ভরা কয়েক হাজার বেলুন দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে ছেড়েছে। এর মধ্যে গত শনি ও রোববার তারা প্রায় ছয়শ'র মতো বেলুন পাঠিয়েছে। এগুলোকে তারা উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশে দক্ষিণ কোরিয়ারা যারা পিয়ংইয়ং বিরোধী প্রচারাভিযানের জন্য লিফলেটবাহী বেলুন পাঠিয়েছে, তাদের জন্য 'উপহার' বলে উলেস্নখ করেছে।
উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন সামরিক তৎপরতার প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া ২০১৮ সালে আন্তঃকোরিয়া সামরিক চুক্তি স্থগিত করে। এরপর সিউল সীমান্তের আশপাশে প্রপাগান্ডা সামরিক তৎপরতা ফের শুরু করে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত থেকে লাউডস্পিকার বাজিয়ে উত্তর কোরিয়া বিরোধী প্রচার প্রচারণা চালানো।
গত রোববার উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের প্রভাবশালী বোন কিম ইয়ো-জং দক্ষিণ কোরিয়ার লাউডস্পিকারে প্রচার ও লিফলেট ছড়ানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, 'সীমান্তে লিফলেট ছড়িয়ে এবং লাউডস্পিকার বাজিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া উসকানি দিলে অবশ্যই তাদেরকে উত্তর কোরিয়ার নতুন পাল্টা পদক্ষেপের মুখে পড়তে হবে।'
এমন উত্তেজনাকর অবস্থায় উত্তর কোরিয়ার সেনাদের সীমান্ত লঙ্ঘনের এই ঘটনা 'ইচ্ছাকৃত' না হওয়ায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়া এড়ানো গেছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী এর আগেও উত্তর কোরিয়ার সেনাদের উদ্দেশ করে সতর্কতামূলক গুলিবর্ষণ করেছে। তবে এ ধরনের ঘটনা দুই কোরিয়ার বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমায়ই বেশি ঘটেছে।
১৯৫০-৫৩ সাল পর্যন্ত হওয়া দুই কোরিয়ার যুদ্ধ কোনো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়নি, তাদের মধ্যে শুধু একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছে; সেই বিষয়টি বিবেচনায় অন্তত কাগজে-কলমে দুই কোরিয়া এখনো যুদ্ধের মধ্যেই আছে।