ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের সহিংসতা-বিধ্বস্ত জিরিবাম জেলায় মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পরিদর্শনে যাওয়ার আগে সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে একটি নিরাপত্তা দল। সোমবার রাজ্য নিরাপত্তা বাহিনীর ওই দল মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে জিরিবাম জেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে বিদ্রোহীদের অতর্কিত হামলার মুখে পড়ে। গত কয়েকদিন ধরে নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। তথ্যসূত্র : এনডিটিভি
মঙ্গলবার মণিপুর রাজ্যের জিরিবাম জেলা পরিদর্শনে যাওয়ার করার কথা মুখ্যমন্ত্রী বীরেন এন সিংহের। তার এই সফরের আগে 'অ্যাডভান্সড সিকিউরিটি কনভয়' জিরিবাম জেলায় যাচ্ছিল। পথে সেই গাড়িবহর লক্ষ্য করে একাধিকবার গুলি চালায় হামলাকারীরা। এ সময় পাল্টা গুলি চালায় নিরাপত্তা কর্মীরাও। গুলির লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দুই নিরাপত্তাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়।
পুলিশ বলছে, গোলযোগপূর্ণ জিরিবাম জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে ৫৩ নম্বর জাতীয় সড়কে এ হামলা হয়। সড়কটির পাশে কোটলেন গ্রামের কাছে এখনও গোলাগুলি চলছে। জাতিগত দাঙ্গা কবলিত মণিপুর রাজ্যে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার জেরে সর্বশেষ এই অতর্কিত হামলা হলো।
আপাতত পরিস্থিতি শান্ত হলেও মণিপুরের জিরিবাম জেলায় দুদিন আগেই দুটি পুলিশ ফাঁড়ি, একটি ফরেস্ট বিট অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। মেইতেই ও কুকি জনজাতির বাসিন্দাদের একাধিক বাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক এই সহিংসতা শুরু হয় ৬ জুন। স্থানীয়রা ৫৯ বছর বয়সি মেইতেই কৃষক সইবাম শরৎকুমার সিং মৃতদেহ উদ্ধার করে। তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ ছিলেন। ৬ জুন তার মরদেহ মেলে। এতেই গত এক বছর ধরে মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে চলা উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
তার মৃতদেহ উদ্ধারের পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনীও মোতায়েন করতে হয়েছে। কিন্তু দ্রম্নত পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ঘটনার প্রভাব প্রতিবেশী রাজ্য আসামেও ছড়িয়ে পড়ে। জাতিগত সহিংসতার জেরে প্রায় ৬০০ জন পালিয়ে কাছাড় জেলার লখিপুরে আশ্রয় নিয়েছিল আগেই।
ইম্ফল থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরের জিরিবাম জেলা মণিপুরের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর একদিকে আসামের সীমানা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক এর ওপর দিয়ে চলে গেছে। সংলগ্ন পাহাড়ে বহু কুকি জনজাতিভুক্ত মানুষের বাস। সব মিলিয়ে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ এই জায়গা।
মেইতেই, কুকি, মুসলিম, নাগা ও অ-মণিপুরী মানুষের বাসস্থান জিরিবাম জেলা। গত বছর মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে সংঘর্ষের খুব বেশি প্রভাব পড়েনি জিরিবামে। তবে এবার বড় সহিংসতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।