চার জিম্মিকে উদ্ধার করতে গিয়ে গাজার মধ্যাঞ্চলে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে শনিবার ভয়াবহ হামলা চালিয়ে ২৭৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এর প্রতিবাদে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশনের আহ্বান করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এই হত্যাকান্ডকে 'রক্তাক্ত গণহত্যা' বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা
গাজার মিডিয়া অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে জিম্মি উদ্ধারের নামে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২৭৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক মানুষ। নিজেদের 'টেলিগ্রাম' চ্যানেলের বিবৃতিতে মিডিয়া অফিস আরও জানিয়েছে, আহতদের আল-আওদা এবং আল-আকসা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংকুলান হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ইসরাইলের ক্রমাগত অবরোধের ফলে প্রায় অকার্যকর উপত্যকাটির বিভিন্ন হাসপাতাল। সেখানে নেই জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম। মিলছে না পর্যাপ্ত খাদ্য। এ ছাড়া হাসপাতলগুলোতে জ্বালানির সরবরাহ না থাকায় বিদু্যৎ সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় আহতদের কেউই সঠিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম 'ওয়াফা নিউজ' জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে। এসব হত্যাকান্ডকে 'রক্তাক্ত গণহত্যা' বলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এক্ষেত্রে তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি অধিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়েছে, আব্বাস জোর দিয়েছেন, পূর্ব জেরুজালেমসহ গাজা এবং পশ্চিম তীরে মানবিক বিপর্যয় বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের জরুরি প্রয়োজন। এ ছাড়া গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলো কার্যকর করতেও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
আট মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সেখানে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের অভাবও তীব্র। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ইসরাইলকে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। সেই সঙ্গে রাফাহ শহরে অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। তারপরও ইসরাইলি সেনাবাহিনী শহরটিতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে অন্তত ১০ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন।
গাজায় আশ্রয়হীন শরণার্থীদের হত্যা বন্ধ করুন : জাতিসংঘ
এদিকে, জাতিসংঘ অবিলম্বে গাজায় হত্যাকান্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিভাগের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ইসরাইলকে এখনই থামাতে হবে। অসহায় আশ্রয়হীন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে তারা কিছুই অর্জন করতে পারবে না। শরণার্থী শিবিরে নৃশংসতার চিত্রই বলে দিচ্ছে, ইসরাইল প্রতিদিন কীভাবে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, গাজার কোথাও সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ কোনো স্থান নেই, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে ইসরাইল। এখানে শুধু মৃতু্যর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
অভিযানকালে কিছু জিম্মিকে হত্যা করেছে ইসরাইল
আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবির ও নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে ইসরাইলের জিম্মি মুক্তি অভিযানে কিছু জিম্মি নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডস জানিয়েছে।
কাসাম ব্রিগেডসের মুখপাত্র আবু উবাইদা তার 'টেলিগ্রাম' চ্যানেলে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'ইসরাইল ভয়াবহ গণহত্যা ঘটিয়ে তাদের কিছু জিম্মিকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, তবে অভিযান চলাকালে তারা অন্য কয়েকজনকেও হত্যা করেছে।'
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের হাতে বন্দি হয়ে থাকা চার জিম্মিকে শনিবার গাজায় এক অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে ইসরাইলি বাহিনী। যে এলাকা থেকে এই জিম্মিদের উদ্ধার করা হয়েছে, সেই নুসেইরাতে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান ও ড্রোন হামলায় অন্তত ২৭৪ জন নিহত হয়েছেন বলে হামাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আট মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। আবু উবাইদা বলেছেন, 'শনিবারের এই অভিযান শত্রম্নপক্ষের জিম্মিদের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে এবং তাদের অবস্থা ও জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।'
নুসেইরাত এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। গত আট মাসে সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের অনেকগুলো লড়াইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়াল
ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে। রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার গাজার নুসেইরাত শিবিরে ইসরাইল হামলা চালায়। এ ঘটনায় নিহত হন অন্তত ২৭৪ ফিলিস্তিনি এবং আহত হয় ৬৯৮ জন। এর ফলে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৮৪-তে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে অবরুদ্ধ নগরীতে আহতের সংখ্যা এখন ৮৪ হাজার ৪৯৪।