টানা ১০ বছর পর বিরোধী দলনেতা পাচ্ছে ভারত। আর সেই পদে দলের প্রধান মুখ রাহুল গান্ধীকে চাইছে কংগ্রেস। শনিবার দিলিস্নতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুলকে বিরোধী দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করে প্রস্তাব পাস হয়েছে। একই সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীকে দলের সংসদীয় দলের নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ করে প্রস্তাব পাস করানো হয়েছে। তথ্যসূত্র : ইনডিয়ান এক্সপ্রেস
বিরোধী দলনেতার পদ পেতে হলে লোকসভায় মোট আসনের ১০ শতাংশ পেতে হয়। অর্থাৎ, ৫৫ জন এমপির প্রয়োজন পড়ে। ২০১৪ সালে এবং ২০১৯ সালে নূ্যনতম সেই সংখ্যাও জোগাড় করতে পারেনি কংগ্রেস। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার কংগ্রেসের হাতে ৯৯ জন এমপি। সম্প্রতি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন আরও দুই এমপি। সঙ্গে রয়েছে 'ইনডিয়া' জোটের শরিকদের সমর্থন। ফলে কংগ্রেসের হাতে সরকারকে কোণঠাসা করার ভালো সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাহুল বিরোধী দলনেতা হলে লড়াইটা জোরাল হবে বলে মনে করছে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটি।
এদিন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কংগ্রেস নেতারা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, দুই লোকসভার পর দল যে ঘুরে দাঁড়ানোর সংকেত দিচ্ছে, সেটার নেপথ্যে রাহুলের 'ভারত জোড়ো যাত্রা' এবং 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। যে তৎপরতার সঙ্গে তিনি কংগ্রেসের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন, সেটারও প্রশংসা করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এই ফলের কৃতিত্ব পুরোটাই রাহুলের। এমনকি খোদ কংগ্রেস সভাপতি মলিস্নকার্জুন খাড়্গে নাকি ওয়ানাড় এবং রায়বেরিলির এমপিকে বিরোধী দলনেতার পদ গ্রহণ করতে অনুরোধ করেছেন।
যদিও রাহুল শেষ পর্যন্ত ওই পদ গ্রহণ করবেন কিনা সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। বিরোধী দলনেতা হলে রাহুলকে আটকে থাকতে হবে লোকসভাতেই। মাঠে নেমে সংগঠনের গতি আনার যে চেষ্টা তিনি করছেন, বা ভারত জোড়ো যাত্রার মাধ্যমে জনসংযোগের যে চেষ্টা করছেন সেটা বিরোধী দলনেতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে করা মুশকিল। আবার সোনিয়া গান্ধী এরই মধ্যে কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেত্রীর পদে রয়েছেন। রাহুল যদি লোকসভার নেতা হয়ে যান তাহলে ফের পরিবারতন্ত্রের অভিযোগে সরব হওয়ার সুযোগ পাবে বিজেপি।
ন্যায় যাত্রার পর এবার 'ধন্যবাদ যাত্রা'
লোকসভা নির্বাচনের আগে 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'য় হেঁটেছিলেন রাহুল গান্ধী। দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে কখনো হেঁটে, কখনো বাসে চেপে ঘুরেছিলেন। নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর এবার নতুন 'যাত্রা'র কথা ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। বলা হয়েছে, এবার উত্তরপ্রদেশে 'ধন্যবাদ যাত্রা'য় হাঁটবেন রাহুলসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। উত্তরপ্রদেশে ভোটের ফল দেখে সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
আগামী ১১ থেকে ১৫ জুন উত্তরপ্রদেশে 'ধন্যবাদ যাত্রা'র আয়োজন করেছে কংগ্রেস। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি কর্মী এবং সমর্থকরাও এই কর্মসূচিতে পা মেলাবেন। উত্তরপ্রদেশে মোট ৪০৩টি বিধানসভা আসন রয়েছে। প্রতিটি বিধানসভায় যাবে এই 'যাত্রা'। মূলত, উত্তরপ্রদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতেই এমন কর্মসূচি বলে জানিয়েছে কংগ্রেস।
কংগ্রেস জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১১ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ঘুরবেন তাদের নেতৃত্ব। বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ভারতের সংবিধানের একটি করে প্রতিলিপি।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ধাক্কা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। যেখানে ভোটের আগে ঘটা করে রামমন্দির উদ্বোধন করা হয়েছিল, যে রাজ্য বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত সেখানে ৮০টির মধ্যে বিজেপি মাত্র ৩৩টি আসনে জয় পেয়েছে। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট 'ইনডিয়া' পেয়েছে ৪৩টি আসন। তার মধ্যে কংগ্রেসের ছয়টি এবং তাদের জোট শরিক সমাজবাদী পার্টির ৩৭টি আসন রয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনী ফলে ব্যাপক তফাত রয়েছে। গতবার ওই রাজ্যে ৬২টি আসন বিজেপি একাই জিতেছিল। সেইবার সমাজবাদী পার্টি পেয়েছিল পাঁচটি এবং কংগ্রেস পেয়েছিল একটি আসন। এবারের ফল কার্যত উল্টে গেছে। এমনকি, বারানসি থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জিতলেও তার জয়ের ব্যবধান বেশ কম- মাত্র দেড় লাখ।
এবারের ভোটে উত্তরপ্রদেশের আমেথি আননের ফলও বিশেষ চমক দিয়েছে। ওই আসনে গতবার রাহুলকে হারিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির স্মৃতি ইরানি। তিনি মোদির মন্ত্রিসভার সদস্যও বটে। এবার আমেথি থেকে তিনি দেড় লাখের বেশি ভোটে হেরে গেছেন কংগ্রেসের কিশোরীলাল শর্মার কাছে। সার্বিকভাবে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস এবং তাদের জোট 'ইনডিয়া'র ফল ভালো। সেই কারণেই ভোটের পর 'ধন্যবাদ যাত্রা'র ডাক দেওয়া হলো।