রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ৮ মাস

নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৭৩১ 'পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই গাজার স্কুলে হামলা করেছে ইসরাইল' যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব : আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের দ্বন্দ্ব
যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
একদিন-দুইদিন করে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের আট মাস পূর্ণ হয়েছে শুক্রবার। ইসরাইলি হামলা থেকে বাঁচতে বারবার আশ্রয় বদল করতে বাধ্য হয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরাইলি বাহিনী রাফাহতে হামলা বৃদ্ধি করায় সেখান থেকেও লোকজন শেষ সম্বলটুকু নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। ছবিটি শুক্রবার দক্ষিণ গাজার রাফাহ থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ?উপত্যকায় ইসরাইলের লাগাতার হামলার আট মাস পূর্ণ হয়েছে শুক্রবার। তারপরও ছিটমহলটির মধ্যাঞ্চলে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। গত কয়েকদিন ধরে গাজার এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর ধারাবাহিক বিমান হামলা ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম 'আল-জাজিরা'র গাজা প্রতিনিধি বলেন, আল-আকসা হাসপাতাল থেকে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সকে দেইর আল-বালাহ শহরের পূর্ব অংশে যেতে দেখেছি। শুক্রবার ওই অঞ্চলে একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তথ্যসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স

নিহতদের মধ্যে নুসেইরাতের জনপ্রিয় মেয়র ইয়াদ আল-মাগারিও রয়েছেন। পৌরসভা দপ্তরে ইসরাইলি বাহিনী হামলায় তিনি নিহত হন। সোস্যাল মিডিয়া পস্ন্যাটফর্ম 'এক্সে' দেওয়া এক পোস্টে 'ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর'র চেয়ারম্যান রামি আবদুল নিহত আল-মাগারিকে 'গাজা উপত্যকার সবচেয়ে সক্রিয় মেয়রদের একজন' বলে অভিহিত করেছেন। এ ছাড়া গাজার মিডিয়া অফিস নুসেইরাতের মেয়রকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। প্রেস অফিস এক বিবৃতিতে নুসেইরাতের মেয়র ইয়াদ আহমেদ আল-মাগারির হত্যাকান্ডকে 'বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ' বলে অভিহিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আল-মাগারি 'নিজের দায়িত্ব ও কাজের প্রতি অনুগত ও নিবেদিত' ছিলেন এবং যুদ্ধের শুরু থেকে পুরোটা সময়জুড়ে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের লোকদের সহায়তায় নিযুক্ত ছিলেন।

এর আগে ইসরাইলি হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় আজ-জাহরা এবং মধ্য গাজার মাগাজি পৌরসভার মেয়রও নিহত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজাজুড়ে বেশ কয়েকটি পৌরসভার সদর দপ্তরও ধ্বংস হয়ে গেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'ইসরাইলি হামলায় নিহত মেয়ররা ছিলেন পরিশ্রমী ও বিরতিহীন সেবার বিশ্বস্ত উদাহরণ।'

শুক্রবার পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর চলমান ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৩৬ হাজার ৭৩১ জন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৮৩ হাজারের বেশি।

'পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই গাজার স্কুলে

হামলা করেছে ইসরাইল'

এদিকে, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইসরাইল গাজায় তাদের একটি স্কুলে 'পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই' বোমা মেরেছে। সেখানে হাজার হাজার বাস্তুচু্যত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাত এলাকার স্কুলের সোস্যাল মিডিয়া পস্ন্যাটফর্ম এক্স-এ ফিলিপ লাজারিনি লিখেছেন, মধ্য গাজার নুসেইরাত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত 'আরেকটি ইউএনআরডবিস্নউএ স্কুলে হামলা চালানো হয়েছে।'

ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, যুদ্ধবিমান স্কুলে আঘাত হানলে ৯ জন 'সন্ত্রাসী' নিহত হয়েছে। হ্যাগারি একটি টেলিভিশন ভাষণে বলেন, যুদ্ধবিমান তিনটি শ্রেণিকক্ষে আক্রমণ করেছিল, যেখানে ইসলামিক জিহাদ এবং হামাসের প্রায় ৩০ জন লুকিয়ে ছিল।

আল-আকসা মার্টিয়ার্স হাসপাতাল জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। লাজারিনি বলেন, স্কুলটিতে যখন আঘাত হানে, তখন ছয় হাজার বাস্তুচু্যত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। তিনি বলেন, ইউএনআরডাবিস্নউএ 'তার সব অবকাঠামো সুবিধা বিষয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এবং সংঘাতের অন্য পক্ষগুলোকে অবহিত করে পরিচালিত হয়।' লাজারিনি বলেন, 'আক্রমণ করা, লক্ষ্যবস্তু করা বা সামরিক উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের ভবন ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট অবজ্ঞা।'

ইসরাইলি মানবাধিকার সংস্থা বি'সেলেম এই হামলাকে 'সন্দেহজনক যুদ্ধাপরাধ' বলে অভিহিত করেছে।

গ্রম্নপটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইল যেমন দাবি করে, হামাস স্কুলটিকে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করার জন্য ব্যবহার করেছিল, তাহলেও এই পদক্ষেপটি বেআইনি, এটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক লোকদের ব্যাপক ক্ষতির ন্যায্যতা দিতে পারে না।' এতে বলা হয়, 'বেসামরিকদের হত্যা গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সামরিক কার্যকলাপের চরিত্রের একটি অনিবার্য ফল' প্রদর্শিত হয়েছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুদ্ধ বন্ধ করতে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব : আমেরিকার

সঙ্গে রাশিয়া-চীনের দ্বন্দ্ব

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে আমেরিকা, যার রূপরেখা তৈরি করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু সেখানে ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন রাশিয়া ও চীন এই প্রস্তাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কাউন্সিলের একমাত্র আরব সদস্য আলজেরিয়াও ইঙ্গিত দিয়েছে, তাই এই প্রস্তাব সমর্থন করতে প্রস্তুত নয়। উলেস্নখ্য, একটি প্রস্তাব পাস করতে কমপক্ষে ৯টি ভোট প্রয়োজন হয় এবং এক্ষেত্রে আমেরিকা, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চীন বা রাশিয়ার ভেটো লাগে না।

এক সপ্তাহ আগে গাজা উপত্যকার জন্য একটি তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন বাইডেন, যা তিনি ইসরাইলি উদ্যোগ বলে জানিয়েছিলেন। যুদ্ধবিরতির এই পরিকল্পনা নিয়ে এখনো গবেষণা করছে হামাস। এজন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন চাইছে আমেরিকা। সোমবার ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি এক পৃষ্ঠার খসড়া প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং বুধবার সেই প্রস্তাবের একটি সংশোধনী দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান এই খসড়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়, যা ইসরাইলের কাছে 'গ্রহণযোগ্য' বলে উলেস্নখ করা হয়েছে; 'হামাসকেও এই প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানায়। দেরি না করে এবং কোনো শর্ত ছাড়াই উভয় পক্ষকে এটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে