গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন

শান্তি আনতে জোর তৎপরতা বাইডেনের

গাজার শান্তি প্রস্তাবের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির আশায় নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পেশ আমেরিকার গাজায় আরও চার 'জিম্মি'র মৃতু্য নিশ্চিত করল ইসরাইল

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করেছে আমেরিকা। হামাসের হাতে অবশিষ্ট ইসরাইলি 'পণবন্দিদের' মুক্তির বিনিময় গাজায় অস্ত্রবিরতির সেই প্রস্তাব অবশ্য এখনো সব বাধা দূর করতে পারেনি। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায় চরম জাতীয়তাবাদী দুই মন্ত্রী জোট সরকার ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। নেতানিয়াহু নিজেও বলেছেন, হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করা না পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে থাকবে। ওয়াশিংটন সফরে এসে তিনি বিষয়টি কীভাবে সামলাবেন, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। তা সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সেই বোঝাপড়া কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। উলেস্নখ্য, জি-সেভেন গোষ্ঠী এরই মধ্যেই এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তথ্যসূত্র : এপি, ডিডাবিস্নউ নিউজ, এএফপি গাজার শান্তি প্রস্তাবের বৃহত্তর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির আশায় বাইডেন প্রশাসন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। জাতিসংঘে মার্কিন দূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, একাধিক নেতা ও সরকার এরই মধ্যে সেই পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন দেখিয়েছেন। তাই সেই বোঝাপড়া কার্যকর করার লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশে অবিলম্বে ও নিঃশর্তে প্রস্তাব অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মার্কিন দূত বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এতদিন যেসব পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিল, শান্তি পরিকল্পনার মধ্যে সেসব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন সরাসরি ইসরাইল ও হামাসের ওপরও বোঝাপড়া মেনে নেওয়ার জন্য জোরালো চাপ সৃষ্টি করছে। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির সব ভোটারের সমর্থন আদায় করতেও বাইডেন আগ্রহী। গাজা সংকটকে ঘিরে আমেরিকায় যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, বাইডেনের পক্ষে তা আর উপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন সচেতনভাবেই শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে শান্তি প্রস্তাবের প্রতি পুরোপুরি সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এমন আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। বাইডেন নিজে সোমবার কাতারের নেতা শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে কথা বলেছেন। হামাসের সঙ্গে মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে তার বিশেষ ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে সেই সংলাপ বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। সালিভান তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আকিফ চায়াতাইয়ের সঙ্গেও সে বিষয়ে কথা বলেন। এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে ইতিবাচক ধারায় এগিয়ে নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকরে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সোমবার হামাস-ইসরাইল সংঘাত নিরসনে মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর, কাতার, আরব আমিরাত এবং জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে তারা মার্কিন প্রশাসনকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া তিন স্তরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দ্রম্নত কার্যকরে পদক্ষেপ নেওয়ার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরাইলকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে তিন স্তরের একটি প্রস্তাব করেছিলেন। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে সব জিম্মির মুক্তি এবং গাজাকে পুনর্গঠনের বিষয়টিকে গুরুত্বারোপ করেছেন বাইডেন। গাজায় আরও চার 'জিম্মি'র মৃতু্য এদিকে, গাজায় আরও চারজন জিম্মির মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী- আইডিএফ। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরাইলি অভিযানের সময় চারজন একসঙ্গে মারা যান। হামাসের কাছে এখনো তাদের মরদেহ রয়েছে বলে জানিয়েছে সামরিক বাহিনী। আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, গোয়েন্দারা সাম্প্রতিক সপ্তাহে যেসব তথ্য পেয়েছে, এতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে। বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে তিনি বলেছেন, 'হামাসের বিরুদ্ধে খান ইউনিসে আমাদের অভিযান চলার সময় এই চারজন একসঙ্গে নিহত হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।' গত ডিসেম্বরে হামাস তিনজনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের মতে, দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলার সময় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয়েছিল এবং ২৫১ জনকে তারা (হামাস) 'জিম্মি' করেছিল। নভেম্বরে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় তারা ১০৫ জন বেসামরিক নাগরিককে মুক্তি দিয়েছিল। আরও প্রায় ১২০ জন 'জিম্মি' অজ্ঞাত রয়ে গেছেন, অনেকেই মারা গেছেন বলে ইসরাইলি কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।