রক্তাক্ত ফিলিস্তিন

গাজায় যুদ্ধ নিয়ে বাইডেনের নতুন প্রস্তাব

যদি অবহেলায় সময় পেরিয়ে যায় তবে ভবিষ্যৎ ভয়াবহ : বাইডেন প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে হামাস, প্রত্যাখ্যান নেতানিয়াহুর

প্রকাশ | ০২ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের উত্তর গাজায় ২০ দিনের ধ্বংসযজ্ঞ শেষে তাদের অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে ইসরাইল। শুক্রবার ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা উত্তর গাজার জাবালিয়া শহরে তাদের মিশন শেষ করেছে এবং নতুন অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনী শহরের অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। তাদের অভিযানে জাবালিয়া শহরের বর্তমান অবস্থা ফুটে উঠেছে ওপরের ছবিতে -রয়টার্স অনলাইন
ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ফলে প্রতিদিন রক্তাক্ত হচ্ছে ফিলিস্তিন। চলমান এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে শুক্রবার নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর তা মেনে নিতে হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বাইডেন বলেছেন, 'এখন এই যুদ্ধ বন্ধের সময় এসেছে।' এদিকে, হামাস যুদ্ধবিরতির বাইডেনের এই প্রস্তাবকে 'ইতিবাচক' হিসেবে দেখলেও প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল। শনিবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হামাসের সামরিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত রাখা হবে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, টাইমস অব ইসরাইল বাইডেন প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় তিনটি স্তর বা পর্যায় রয়েছে। প্রথম স্তরে গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে। এই পর্বে রাফাহসহ গাজার অন্য জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে এবং ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি কয়েকশ' ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময়ে নিজেদের কব্জায় থাকা কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এই দফায় যেসব জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের মধ্যে বয়স্ক এবং নারীরা প্রাধান্য পাবে। সেই সঙ্গে এই ছয় সপ্তাহের প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করবে অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক। হামাস ও ইসরাইলের মন্ত্রিসভা ও প্রতিরক্ষা বাহিনী এই পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবে। যদি এই আলোচনা ছয় সপ্তাহ সময়সীমার মধ্যে শেষ না হয়, তাহলে পরিকল্পনার প্রথম পর্ব বা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়বে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস এবং ইসরাইল- দুই পক্ষের ঐকমত্যের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে গাজায় শান্তি পরিকল্পনার প্রথম স্তর। তারপর শুরু হবে পরিকল্পনা দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের সবাইকে মুক্তি দেবে হামাস এবং তার বিনিময়ে গাজার বাসিন্দারা পাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। পরিকল্পনার তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ভবন-রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজ শুরু হবে। বাইডেন বলেন, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এবং রাজনীতিবিদদের একাংশ যে এখনই গাজা যুদ্ধের অবসান চায় না, সে সম্পর্কে তিনি ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। তিনি আরও বলেছেন, 'এই মহলটির নির্দেশনা অনুযায়ী চললে সামনে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তারা গাজা দখল করতে চায়। এ কারণেই তারা সেখানে বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আগ্রহী এবং জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারেও তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি জানি, যে পরিকল্পনা আমি প্রস্তাব করছি, তাতে ইসরাইলি নেতৃত্বের একটি অংশ ব্যাপকভাবে আপত্তি জানাবে। তারপরও আমি ইসরাইলের নেতৃত্বকে এই পরিকল্পনা সমর্থনের উদাত্ত আহ্বান জানাব।' মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমেরিকার প্রথম ও একমাত্র প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি যুদ্ধের সময় ইসরাইল সফরে গেছি। শুধু তাই নয়, এই যুদ্ধের সুযোগে ইরান যখন লোহিত ও পারস্য সাগরে জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালানো শুরু করল, তখন আমি সেখানে মার্কিন বাহিনী পাঠিয়েছি। আগে কোনো প্রেসিডেন্ট এমন পদক্ষেপ নেননি। তাই ইসরাইলে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আমার আহ্বান, এখন বিরতি দিন এবং একবার চিন্তা করুন, এখন একটি বিশেষ সময়ে আমরা রয়েছি সবাই। যদি অবহেলায় এই সময় পেরিয়ে যায়, তাহলে ভয়াবহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।' মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, গাজা যুদ্ধ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামনে এক অভূতপূর্ব দোদুল্যমান অবস্থার সৃষ্টি করেছে। একদিকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইসরাইলের দৃঢ় সমর্থক আমেরিকার ইসরাইলপন্থি কমিউনিটির কাছে বেশ জনপ্রিয়, অন্যদিকে তার রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি বড় অংশে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ এবং সেখানকার ফিলিস্তিনিদের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য তাকে দায়ী করছেন। গাজা ইসু্যতে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে যে দিন দিন তার প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে, তার আঁচ ভালোভাবেই পাচ্ছেন বাইডেন। বাইডেনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইতিবাচক : হামাস এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে 'ইতিবাচক' বিবেচনা করছে হামাস। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের আহ্বান জানানোর পর শুক্রবার সন্ধ্যায় হামাস একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, 'স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার এবং এই উপত্যকার পুনর্গঠন ও বন্দি বিনিময়' নিয়ে বাইডেনের বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছে তারা। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান নেতানিয়াহুর তবে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বাইডেনের শান্তি আলোচনা শুরুর আহ্বানে নেতিবাচক মনোভাব দেখান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামাসের গাজা শাসন করা ও ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে ওঠার ক্ষমতা নিঃশেষ না করা পর্যন্ত ইসরাইলি সেনারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, 'স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসরাইল তার শর্তে অটল থাকবে। এসব শর্ত পূরণ হওয়ার আগে ইসরাইল স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে, এমন ধারণা বাস্তব হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।'