গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন

নিজ দাবিতে অনড় দুই পক্ষই

হামলা বন্ধ না হলে আর কোনো আলোচনায় যাবে না হামাস হামাস সব জিম্মিকে মুক্তি দিলেই শান্তিচুক্তি : ইসরাইল

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান আগ্রাসনের সময় আর কোনো আলোচনায় অংশ নেবে না সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তবে ইসরাইল হামলা বন্ধ করলে জিম্মি এবং বন্দিদের বিনিময়সহ একটি 'পূর্ণাঙ্গ চুক্তি' নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী তারা। বৃহস্পতিবার মধ্যস্থতাকারীদের এই কথা বলেছে হামাস। আর ইসরাইল জানিয়েছে, হামাস যদি তাদের কব্জায় থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেয়, কেবল তাহলেই গাজা ইসু্যতে শান্তিচুক্তিতে আসার ব্যাপারটি বিবেচনা করবে ইসরাইল। তথ্য সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা। গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে একটি চুক্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছে মধ্যস্ততাকারী দেশ মিসর ও কাতার। তবে বারবারই মাঝপথে এসে এই আলোচনার অগ্রগতি থেমে যাচ্ছে। এর জন্য অবশ্য একে-অপরকে দোষারোপ করেছে উভয়পক্ষ। বৃহস্পতিবার হামাসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'গাজায় আমাদের জনগণ, পরিবার-পরিজনদের ওপর গণহত্যা চলছে। যারা বেঁচে আছে, তারা প্রতিদিন আগ্রাসন-দুর্ভিক্ষ-দখলদারিত্বের শিকার হচ্ছে। হামাস এবং ফিলিস্তিনের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন গোষ্ঠী মনে করে, এই পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় হামাসের অংশগ্রহণ সার্বিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হবে না। তবে (৩০ মে) আমরা আমাদের মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়ে দিয়েছি, যদি দখলদার বাহিনী গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করে, তাহলে গাজা ইসু্যতে একটি সম্পূর্ণ (শান্তি) চুক্তির জন্য আমরা প্রস্তুত। এই চুক্তিতে (সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া সংক্রান্ত) একটি বিস্তৃত সমঝোতাও অন্তর্ভুক্ত হবে।' অন্যদিকে, ইসরাইলে প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, 'সবার আগে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে। যদি তা না হয়- গাজায় অভিযান থামবে না, কোনো চুক্তিও হবে না। এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে থেকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর রাফায় অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। লাখ লাখ বেসামরিক ফিলিস্তিনি শহরটিতে অবস্থান করছেন। গাজার বিভিন্ন এলাকায় গত প্রায় আট মাস ধরে ইসরাইলি বাহিনীর চলমান অভিযানের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে রাফাহতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন এই ফিলিস্তিনিরা। সম্প্রতি জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান 'ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস' (আইসিজে) রাফাহতে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান বন্ধের আদেশ দিয়ে রায় দিয়েছে; কিন্তু সেই রায় উপেক্ষা করে সেখানে সেনা অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। কিছুদিন আগে রাফাহতে ইসরাইলি বাহিনীর বোমায় ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির মৃতু্য হয়েছে, যাদের সবাই সাধারণ বেসামরিক। ওই ঘটনার পর থেকে বিশ্বজুড়ে যখন ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা চলছে, সে সময়ই এই বিবৃতি দিলো হামাস। গাজায় ইসরাইলের হামলায় ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত এদিকে গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। তাদের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় ৩৬ হাজার ২৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮২ হাজার ৫৭ জন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বলছে, ইসরাইলি বাহিনী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার রাফাহতে বিমান হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া উপকূলীয় এই ভূখন্ডের আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় লড়াই চলছে। গাজা উপত্যকা এবং মিসরের মধ্যে নিকটবর্তী সীমান্ত বরাবর একটি বাফার জোনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানানোর একদিন পর ইসরাইল রাফাহতে এই আক্রমণ চালাল। সীমান্ত বরাবর অবস্থিত এই বাফার জোন 'ফিলাডেলফি করিডোর' নামে পরিচিত এবং এটি দখলে নেওয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের পুরো স্থল সীমান্তের ওপর কার্যকর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে ইসরাইল।