শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
গাজার রাফাহতে হামলা

এরপরও যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন নেতানিয়াহু

'হামলাটি ছিল একটি দুঃখজনক ভুল, তবে লক্ষ্য অর্জনের আগে যুদ্ধ শেষ করতে চাই না' তাঁবু আশ্রয় শিবিরে ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বিশ্ব
যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০
এরপরও যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন নেতানিয়াহু

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী রাফাহর একটি তাঁবু আশ্রয় শিবিরে ইসরাইলের হামলার পর তা নিয়ে বিশ্বনেতাদের ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যেই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দম্ভভরে বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। আশ্রয় শিবিরে হামলা এবং তা নিয়ে বিশ্বনেতাদের ক্ষোভ প্রকাশের জেরে সোমবার ইসরাইলি পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা শোরগোল করেন। পার্লামেন্টে নেতানিয়াহু বলেন, 'রাফাহ থেকে এরই মধ্যে আমরা প্রায় ১০ লাখ সাধারণ ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নিয়েছি। এবং বেসামরিক মানুষদের ক্ষতি না করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পরও মাঝেমধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেদনাদায়ক ভুল হয়ে যায়। আমরা ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করছি এবং একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হবো। কারণ, এটাই আমাদের নীতি।' তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা

হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রোববারের ওই হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। হামলায় আরও শতাধিক মানুষ গুরুতরভাবে আগুনে পুড়ে গেছেন, হাত-পা ভেঙে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে।

ইসরাইলের পার্লামেন্টে বক্তৃতায় নেতানিয়াহু বলেন, 'হামলাটি ছিল একটি দুঃখজনক ভুল। তবে আমরা লক্ষ্য অর্জনের আগে আমি যুদ্ধ শেষ করতে চাই না।' তিনি বলেন, ইসরাইল বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের সতর্কতা নিয়েছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিরীহ মানুষদের ক্ষতি না করতে তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার সময় হামাসের হাতে জিম্মি ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইসরাইলিদের অনেকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গত সপ্তাহে একটি রায়ে ইসরাইলকে রাফাহ এলাকায় যে কোনো ধরনের অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল, ইসরাইলের এই হামলা ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষকে আরও ক্ষতি করতে পারে।

রোববারের ওই বিমান হামলাটি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল, ওই হামলায় হামাসের অনেক নেতাই মারা যাবেন। কিন্তু এতে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ধারণা করা হচ্ছে, এর সঙ্গে বিপুল পরিমাণে দাহ্য পদার্থ ছিল। সেটি কীভাবে এলো, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

আশ্রয় শিবিরে হামলা : ইসরাইলের

বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বিশ্ব

এদিকে, গাজার রাফাহ শহরে শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের হামলার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে বিশ্ব। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাল আল-সুলতান এলাকার আশপাশে হামলার আগমূহুর্তে পরিবারগুলো ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দুই সপ্তাহ আগে রাফাহর পূর্বে ইসরাইলি বাহিনী স্থল আক্রমণ শুরু করার পর হাজার হাজার মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

হামলার সমালোচনা করে ইসরাইলের ইউরোপীয় মিত্র ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা রাফাহ হামলায় ক্ষুব্ধ। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এক্স-এ পোস্ট করেছেন, 'এই অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। রাফাহতে ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের জন্য কোনো নিরাপদ এলাকা নেই। আমি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি পূর্ণ সম্মান এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি।' গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যায় প্যারিসে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিলেন।

অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেফ বোরেল পোস্ট করেছেন, 'রাফাহ থেকে ইসরাইলি হামলায় ছোট শিশুসহ কয়েক ডজন বাস্তুচু্যত ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবরে আতঙ্কিত। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।' ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রসেটো বলেন, 'এর মাধ্যমে ইসরাইল ঘৃণা ছড়াচ্ছে, ঘৃণাকে শিকড় দিচ্ছে, যা তাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের জড়িত করবে।'

আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের প্রধান মুসা ফাকি মাহামত বলেছেন, 'ইসরাইল রাষ্ট্র দায়মুক্তির সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চলেছে এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায়ের অবমাননা করে চলছে।' জার্মানির পররাষ্ট্র দপ্তর বিমান হামলায় শিশুসহ পোড়া মৃতদেহের ছবিকে 'অসহনীয়' বলে বর্ণনা করেছে। এক পোস্টে তারা বলেছে, 'সঠিক পরিস্থিতি অবশ্যই স্পষ্ট করতে হবে।'

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, 'এই ভয়াবহতা বন্ধ করতে হবে।' জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, 'এই হামলা প্রমাণ করে, সেই আগের পদ্ধতিতেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। যে কারণে এরই মধ্যে অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।'

ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোর দিয়ে বলেছে, ইসরাইলকে গত সপ্তাহে রাফাহতে হামলা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত যে রায় দিয়েছেন, তার প্রতি সম্মান করা উচিত। ইইউ'র শীর্ষ কূটনীতিক জোসেফ বোরেল এই হামলাকে 'ভীতিকর' বলে বর্ণনা করেছেন।

লক্ষ্যবস্তু ভুল ছিল বলে ইসরাইল যে বক্তব্য দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করে 'মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স' বলছে, হামলাটি সুনির্দিষ্ট ছিল। কথিত নিরাপদ রাফাহতে একটি জনবহুল ক্যাম্পে চালানো আক্রমণ প্রমাণ করছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জীবন তাদের কাছে মূল্যহীন।

এই চিত্রকে আমেরিকা 'হৃদয় বিদারক' বলছে। তবে তারা এটাও বলেছে যে, ইসরাইলেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, 'হামাসকে প্রতিহত করার অধিকার আছে ইসরাইলের। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, এই হামলায় হামাসের দুই সিনিয়র কমান্ডার নিহত হয়েছেন, যারা ইসরাইলি বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলার জন্য দায়ী।' তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন, ইসরাইলকে অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে