শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন

বাস্তুচু্যতদের শিবিরে ৮ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

হামলায় নিহত অন্তত ৪০ জন আহত কমপক্ষে ৬৫ তাঁবুগুলো পুড়ে গেছে, গলে গেছে মানুষের শরীর
যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০
ইসরাইলি হামলায় তাঁবুগুলো পড়ে গেছে

ফিলিস্তিনির অবরুদ্ধ গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের একটি আশ্রয় শিবিরে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জন। আহত অন্তত ৬৫ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যম 'ওয়াফা'কে জানিয়েছে, রোববার (২৬ মে) স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে অন্তত আটটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ওই শিবিরের তাঁবুগুলোয় আগুন ধরে যায়। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রাফাহতে ইসরাইলি বিমান হামলার ফলে কমপক্ষে ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং আহত হন আরও বহু মানুষ। মন্ত্রণালয় আরও বলছে, নিহতদের বেশিরভাগই বাস্তুচু্যত নারী ও শিশু, যাদের ওপর 'গণহত্যার হাতিয়ার' দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এসব মানুষ আগে থেকেই পানি, খাদ্য, ওষুধ, বিদু্যৎ এবং জ্বালানি থেকে বঞ্চিত ছিল। দুই সপ্তাহ আগে রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চলে ইসরাইলি বাহিনী স্থল অভিযান শুরু করার পর হাজার হাজার মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে তেল-আল-সুলতান পাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।

রেডক্রসের ইন্টারন্যাশনাল কমিটি বলেছে, রাফাহতে তাদের ফিল্ড হাসপাতাল প্রচুর হতাহতের সংখ্যা পাচ্ছে এবং অন্য হাসপাতালগুলোও প্রচুর সংখ্যক রোগী নিচ্ছে।

হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রাফাতে হামলাকে একটি 'গণহত্যা' বলে বর্ণনা করেছেন। ইসরাইলকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করার জন্য আমেরিকাকে দায়ী করেছেন তিনি। রাফাহ শহরের কুয়েতি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক ব্যক্তি বলেছেন, 'ইসরাইলি হামলায় তাঁবু পুড়ে গেছে, অনেক মানুষের শরীর গলে গেছে।' ইসরাইলি হামলায় জ্বলতে থাকা শরণার্থী শিবিরের তাঁবুগুলো ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স ৪৫ মিনিট পর নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়।

তাল-আস-সুলতান এলাকায় এই হামলা এমন এক সময় হলো, যখন ইসরাইলি বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় জাবালিয়া, নুসেইরাত এবং গাজা সিটিসহ গাজার বিভিন্ন এলাকায় বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বোমাবর্ষণ করেছে এবং ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে এতে কমপক্ষে ১৬০ জন নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, তারা 'নির্ভুল অস্ত্র' ব্যবহার করে হামাস যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাটি 'নিয়ন্ত্রিত বোমা ও সুনির্দিষ্ট বুদ্ধিমত্তার ভিত্তিতে' পরিচালনা করা হয়েছে। আইডিএফের দাবি, এই হামলায় হামাসের পশ্চিম তীরের প্রধান কর্মকর্তা ও ইসরাইলিদের ওপর মারাত্মক হামলায় জড়িত আরেক সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি বাহিনী স্বীকার করেছে, হামলায় বেসামরিক লোকজন আহত হয়েছেন এবং এই ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে।

গত শুক্রবার ইসরাইলকে রাফাহ অঞ্চলে আক্রমণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। তারপরও ইসরাইলের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, অভিযান শুরুর পর থেকে আট লাখের বেশি ফিলিস্তিনি রাফাহ থেকে পালিয়েছে। আর গাজা যুদ্ধের সময় সেখানে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ১০ লাখ শরণার্থী।

একই দিন এর আগে ইসরাইলের তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে আটটি রকেট ছোড়ে হামাস। জানুয়ারির পর থেকে এই প্রথম তেল আবিব লক্ষ্য করে দীর্ঘ পালস্নার রকেট ছুড়ল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি। রোববার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানায়, রাফাহর ওই এলাকা থেকে ইসরাইলে আটটি রকেট ছোড়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে অধিকাংশ রকেটই বাধা দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইল। রকেট হামলায় হতাহতের কোনো খবর হয়নি। হামাসের আল-কাসাম ব্রিগেডস তাদের 'টেলিগ্রাম' চ্যানেলে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'বেসামরিকদের বিরুদ্ধে জায়নবাদীদের নির্বিচার হত্যাকান্ডের' প্রতিক্রিয়ায় ওই রকেটগুলো ছোড়া হয়। উলেস্নখ্য, তেল আবিবের অবস্থান রাফাহ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই আগ্রাসনে হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩৬ হাজারে পৌঁছেছে। রোববার (২৬ মে) বিকালের দিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ জনে। সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে আহত হয়েছেন অন্তত ৮০ হাজার ৬৪৩ জন ফিলিস্তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে