গাজায় আগ্রাসন

জাতিসংঘ আদালতের রায় মানে না ইসরাইল

আইসিজের রায়ের পরপরই রাফাহতে ইসরাইলি হামলা জিম্মি চুক্তি নিয়ে ইসরাইল-হামাস আলোচনা আগামী সপ্তাহে

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জাতিসংঘ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ইসরাইলি বাহিনী শনিবার জাবালিয়ায় বিমান হামলা চালানোর পর ধসেপড়া একটি ভবন থেকে নিহত-আহতদের খোঁজ করছেন ফিলিস্তিনিরা -আল-জাজিরা অনলাইন
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে সামরিক অভিযান স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়ে শুক্রবার যে রায় দিয়েছে জাতিসংঘ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত, তা প্রত্যাখ্যান করেছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভা জানিয়েছে, গাজায় ক্ষমতাসীন সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে ধ্বংস করা এবং গোষ্ঠীটির কব্জায় থাকা জিম্মিদের উদ্ধারে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তথ্যসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় হামাস-ইসরাইলি বাহিনীর যুদ্ধ শুরুর প্রায় দুই মাস পর গত ডিসেম্বরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। মামলার কার্যক্রমের মধ্যেই রাফাহতে অভিযান স্থগিতের আর্জি জানিয়ে আবেদন করেছিল বাদীপক্ষ। সেই আবেদনের জবাবে শুক্রবার রাফাহতে সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিয়ে রায় দেন আদালত। দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার রায়ে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত আইসিজে ইসরাইলকে রাফাহতে হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে বলার পাশাপাশি রাফাহর মিসর সীমান্ত ক্রসিং মানবিক ত্রাণ প্রবেশের জন্য খুলে দেওয়া, গাজায় তদন্তকারীদের প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে গাজায় ঢোকার অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। শুক্রবার জাতিসংঘ আদালতের এই রায়ের পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে রায়কে 'ভুয়া, ভয়ানক এবং ন্যায়বিচার পরিপন্থি' উলেস্নখ করে বলা হয়, 'প্রত্যেক দেশেরই আন্তর্জাতিক আইন ও মূল্যবোধ অনুসরণের ভিত্তিতে নিজেদের নাগরিক ও সীমানা রক্ষার অধিকার রয়েছে এবং ইসরাইল ঠিক তা-ই করছে।' বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'রাফাহর বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে সেখানে অভিযান চালাতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য সেখানকার শত্রম্ন ঘাঁটিগুলোতে অভিযান চালানো। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিসাধন নয়।' এই রায় ঘোষণার পরপরই ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, 'ইসরাইল তার অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ করছে। যারা ইসরাইলকে যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে, তারা আমাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে চায়। আমরা কোনোভাবেই তাতে রাজি হবো না ও যুদ্ধ চালিয়ে যাব।' ইসরাইলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির, যিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিশেষ আস্থাভাজন এবং ক্ষমতাসীন জোট সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শরিক 'রিলিজিয়াস জায়োনিস্ট পার্টি'র শীর্ষ নেতা জাতিসংঘ আদালতের রায়কে সরকারি প্রত্যাখ্যান করেছেন। শুক্রবার আদালতের রায়ের পর ইসরাইলের ফার্স্ট প্রাইম মিনিস্টার ডেভিড বেন গুরিয়ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'এক্সে' এক বার্তায় বলেছেন, 'ইহুদিদের ভবিষ্যৎ ইহুদিদের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করবে। অ-ইহুদিদের সিদ্ধান্তের ওপর নয়।' সাধারণ বেসামরিক ইসরাইলির একটি উলেস্নখযোগ্য অংশও রাফাহতে সারিক অভিযানের পক্ষে। যে কোনো মূল্যে তারা হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের উদ্ধার চান। তেল আবিবের একটি স্টার্ট আপ বিনিয়োগ কোম্পানিতে চাকরিরত ৩৯ বছর বয়সি আদি লেভানন জাতিসংঘ আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'সত্যি কথা বলতে, এই রায় হাস্যকর। কারণ আমাদের নারী, পুরুষ, কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন এখন জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন। তাদের উদ্ধার করা সবচেয়ে জরুরি। একটি দেশ যখন তার নাগরিকদের উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনতে চাইছে, তখন তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা নিরর্থক।' এদিকে, চলমান এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরাইলকে ব্যাপকভাবে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে আমেরিকা। সেই আমেরিকাও রাফাহতে সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে। এমনকি ইসরাইল এই ইসু্যতে আমেরিকার আপত্তিকে আমলে না নেওয়ায় সেখানে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। আইসিজের নির্দেশ অমান্য করে রাফাহতে ইসরাইলি হামলা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের নির্দেশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা অমান্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। আইসিজের রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই রাফাহ শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত শাবউরা ক্যাম্পে দফায় দফায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলের যুদ্ধবিমান। হামলাস্থলের কাছাকাছি কুয়েত হাসপাতালের একজন কর্মী বলেন, তুমুল বোমা হামলার কারণে উদ্ধারকর্মীরা অভিযানস্থলে পৌঁছাতে পারছেন না। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। জিম্মি চুক্তি নিয়ে ইসরাইল-হামাস আলোচনা আগামী সপ্তাহে এদিকে, গাজায় বন্দি ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্ত করতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ইসরাইল-হামাসের মধ্যস্থতামূলক আলোচনা আগামী সপ্তাহে পুনরায় শুরু হবে। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন এক কর্মকর্তা শনিবার এ তথ্য দিয়েছেন। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা-মোসাদ প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতারের প্রধানমন্ত্রী এবং সিআইএ প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর, আলোচনা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে নাম বা নিজের জাতীয়তার পরিচয় দিতে অস্বীকার করেছেন ওই কর্মকর্তা। ওই বৈঠকের পরই আমেরিকার সক্রিয় উপস্থিতিতে মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের নেতৃত্বে আগামী সপ্তাহে নতুন প্রস্তাবের ভিত্তিতে আলোচনা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ওই সূত্র। ইসরাইলের দাবি গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে ১২০ জনকে জিম্মি করে হামাস। তাদের মুক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থার জন্য একে অপরকেও দায়ী করেছে উভয়পক্ষ। ইসরাইল বলছে, তারা হামাসের যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধের দাবি মেনে নেবে না। কারণ তাদের দাবি, এতে গাজায় হামাস আরও শক্তিশালী হবে। উল্টো তারা হামাসকে নির্মূলের শপথ নিয়েছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি চায় হামাস। গাজায় গত সাত মাসের ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ হাজার ৯০৭ ফিলিস্তিনি। ধ্বংস হয়েছে গাজার বেশিরভাগ এলাকা।