শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১
নিহত অন্তত ৫০

গাজায় ইসরাইলের বিরামহীন হামলা

রাফাহ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন আট লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি গাজায় আরও তিন 'জিম্মি'র মরদেহ উদ্ধার ইসরাইলি বাহিনীর
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ মে ২০২৪, ০০:০০
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) গাজায় ইসরাইলের রাফাহতে হামলা সংক্রান্ত রায়ে শুক্রবার বলেছে, ইসরাইলকে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে মানবিক সহায়তার প্রবেশের জন্য মিসরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খুলে দিতে, তদন্তকারীদের এবং ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের জন্য গাজায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার নির্দেশও দিয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলো কার্যকরের অগ্রগতি সম্পর্কে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে ইসরাইলকে। রায় ঘোষণার আগে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বিচারকরা -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের আকাশ ও স্থলপথে বিরামহীন হামলায় আরও অন্তত ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডজুড়ে চালানো পৃথক হামলায় তারা নিহত হন। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে হামাসের নেতৃত্বাধীন যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের ব্যাপক লড়াই চলছে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এবং হামাসের সশস্ত্র শাখা। এদিকে, ইসরাইলি হামলার জেরে এখন পর্যন্ত রাফাহ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন আট লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স

ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো রাফাহর আরও দক্ষিণ-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়েছে, শহরের পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ইবনার দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং তিনটি পূর্ব শহরতলিতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, 'দখলদার (ইসরাইলি বাহিনী) আরও পশ্চিমে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা ইবনার প্রান্তে রয়েছে, যা ঘনবসতিপূর্ণ। তারা এখনো এটি আক্রমণ করেনি।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছি, এবং আমরা দেখছি যে, সেনারা আক্রমণ করেছে এবং সেখান থেকে কালো ধোঁয়া উঠছে। এটি আরেকটি খুব কঠিন রাত ছিল।'

চলতি মাসে গাজার উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে একযোগে ইসরাইলি হামলার ফলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন এবং ইসরাইলি বাহিনী সাহায্য প্রবেশের প্রধান প্রবেশপথও বন্ধ করে দিয়েছে, যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিও বাড়িয়েছে।

ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা ছাড়াই রাফাহতে স্থল হামলা শুরু করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল। আমেরিকাসহ অন্যরা গাজার দক্ষিণের এই শহরটিতে হামলার জন্য ইসরাইলকে ব্যাপকভাবে সমালোচনাও করেছে। তবে ইসরাইল বলেছে, সেখানে হামাস যোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে তাদের অবশ্যই অগ্রসর হতে হবে।

গাজায় পরিচালিত প্রধান সাহায্য সংস্থা 'ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস' বলেছে, চলতি মে মাসের প্রথম দিকে ইসরাইল রাফাহ শহরটিতে হামলা শুরু করার পর থেকে গত সোমবার পর্যন্ত আট লাখের বেশি মানুষ পালিয়ে গেছেন।

গাজায় 'নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল'র জরুরি প্রতিক্রিয়া নেতা সুজে ভ্যান মিগান বলেন, অনেক বেসামরিক নাগরিক এখনো সেখানে আটকে আছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'রাফাহ শহরটি এখন তিনটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিশ্বের সমন্বয়ে গঠিত- পূর্বদিকটি মৌলিক যুদ্ধ অঞ্চল, মাঝামাঝি অঞ্চলটি ভৌতিক শহরে পরিণত হয়েছে এবং পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থানরত জনবহুল জনগোষ্ঠী শোচনীয় পরিস্থিতিতে বসবাস করছে।'

সমান্তরালভাবে ইসরাইলি বাহিনী উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরেও স্থল আক্রমণ বাড়িয়েছে। সেখানে তারা কয়েকটি আবাসিক এলাকাও ধ্বংস করেছে। নিকটবর্তী শহর বেইত হানুনেও হামলা করেছে। ইসরাইল অবশ্য কয়েক মাস আগেও এ অঞ্চলে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এখন তাদের দাবি, হামাসকে সেখানে আবার সংগঠিত হতে বাধা দিতে তাদের আবারও ফিরে আসতে হয়েছে।

গাজায় তিন 'জিম্মি'র মরদেহ উদ্ধার

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অভিযান চালিয়ে তিন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করেছে ইসরাইলি বাহিনী। শুক্রবার এমন দাবি করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ৭ অক্টোবর অন্য ইসরাইলিদের সঙ্গে তাদের জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল হামাস।

ইসরাইলি বাহিনী বলেছে, উত্তর গাজার জাবালিয়ায় সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ অভিযানে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শহরটিতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। ইসরাইলের 'ন্যাশনাল ফরেনসিক ইনস্টিটিউট' এবং ইসরাইলি পুলিশের মেডিকেল কর্মকর্তারা মৃতদেহগুলোকে শনাক্ত করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে