ইসরাইলি আগ্রাসন

ধ্বংসস্তূপেই বাস রাফাহ-ছাড়া ফিলিস্তিনিদের

গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের হামলায় নিহত আরও ৬২ ফিলিস্তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি ইসু্যতে মধ্যস্থতা না করার হুমকি মিসরের

প্রকাশ | ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ইসরাইলি বাহিনীর স্থল অভিযান শুরুর পর পালিয়ে গেছেন বহু ফিলিস্তিনি। আর আশ্রয় নিয়েছেন এর আগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বিভিন্ন ভবনে। ছবিটি বুধবার খান ইউনিস থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আকাশ ও স্থলপথে হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরাইল। রাফাহতে ইসরাইলের স্থল অভিযান শুরুর পর সেখানে থাকা ফিলিস্তিনিরা প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র সরে গিয়ে ধ্বংস্তূপের মধ্যে বসবাস করছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এসব ফিলিস্তিনির মধ্যে দেড় লাখ ইউএনআরডাবিস্নউএ'র সহায়তার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি গাজার উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডাবিস্নউএ রিপোর্ট করেছে, রাফাহ খালি করার জন্য ইসরাইলের ঘোষণার পর বাস্তুচু্যত লোকজন কাছাকাছি শহর খান ইউনিসে ভয়ংকর পরিস্থিতিতে বসবাস করছেন। ইসরাইলের হামলার ঘোষণার পর রাফাহ থেকে সরে আসা আট লাখের বেশি ফিলিস্তিনির মধ্যে প্রায় দেড় লাখ গত ১০ দিনে খান ইউনিসে ইউএনআরডাবিস্নউএ সহায়তার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন। ইউএনআরডাবিস্নউএ'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসবাসকারী পরিবারে, তাঁবু, প্রয়োজনীয় পরিষেবা এবং প্রয়োজনীয় সরবরাহের অভাব রয়েছে, লোকজনের সাহায্যের প্রয়োজন। গত বছরের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে ইসরাইলে এই দশকের সবচেয়ে বড় হামলা চালায় হামাস। এর পরপরই গাজায় বিমান হামলা ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরাইল। সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৭০৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত ৭৯ হাজার ৯৯০ জন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এই গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানালেও ইসরাইল এসবে তোয়াক্কা না করে হামলা চালিয়েই যাচ্ছে। হামলার শুরুর পর ইসরাইলি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে রাফাহ এলাকায় অবস্থান নেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি। পরে ইসরাইল সেখানেও অভিযান চালানোর ঘোষণা দিলে ফিলিস্তিনিরা রাফাহ ছেড়ে সরে অন্যত্র যান। চলতি মাসের শুরুতে রাফাহ সীমান্তের ফিলিস্তিনি অংশ দখলে নেয় ইসরাইল। এরপর থেকে তারা সীমান্ত ক্রসিংটি বন্ধ করে দেয়। এতে অবরুদ্ধ এই অঞ্চলে মানবিক খারাপ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। শুধু রাফাহ নয়, গাজা উপত্যকাজুড়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর বিপর্যয় নেমে এসেছে। গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় আরও ৬২ ফিলিস্তিনি নিহত এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দখলদার ইসরাইলের হামলায় আরও ৬২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৬২ জন নিহত এবং ১৩৮ জন আহত হয়েছেন। উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে না পারায় অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, উত্তর গাজার শেষ দুটি সচল হাসপাতাল আল-আওদা এবং কামাল আদওয়ান ইসরাইলি বাহিনী ঘিরে ফেলেছে। সেখানে ২০০ জনের বেশি রোগী ভেতরে আটকা পড়েছেন। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের বাস্তুচু্যত লোকদের ভিড়ে আবারও বোমা হামলা করেছে ইসরাইল। এতে নারী ও শিশুসহ ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের 'ওয়াফা নিউজ এজেন্সি'। এসব হামলার মধ্যে ভয়াবহ ছিল একটি মসজিদে হামলা। খবরে বলা হয়েছে, উত্তর গাজার ফাতিমা আল-জাহরা মসজিদে ইসরাইলি হামলায় ১০ শিশুসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নিহতদের অধিকাংশই বাস্তুচু্যত নারী ও শিশু। ইসরাইলি অভিযানের পর তারা মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হামলায় পাশের আল-সাহাবা স্ট্রিটের মসজিদ এবং আশপাশের ভবনগুলোরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি ইসু্যতে মধ্যস্থতা না করার হুমকি মিসরের ওদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি-বিষয়ক আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়েছে মিসর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'সিএনএন'র একটি প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার এই হুমকি দিয়েছে দেশটি। মিসরীয় গোয়েন্দারা সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের শর্তাবলি পরিবর্তন এবং একটি চুক্তি বাতিল করেছেন এমন অভিযোগ এনেছিল সিএনএন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মিসরের 'স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিস'র প্রধান দিয়া রাশওয়ান বলেন, 'মিসরের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টায় সন্দেহ প্রকাশ এবং তা বিধ্বস্ত করার প্রচেষ্টা গাজা ও এই অঞ্চলের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে শুধু আরও জটিলতার দিকেই নিয়ে যাবে। এমনকি তা মিসরকে চলমান সংঘাতে মধ্যস্থতা করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতেও প্রভাবিত করতে পারে।' আলোচনার সঙ্গে পরিচিত তিনটি সূত্রের বরাতে একটি প্রতিবেদনে গত মঙ্গলবার সিএনএন বলেছিল, গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের শর্তাবলি পরিবর্তন করেছেন মিসরীয় গোয়েন্দারা। মে মাসের শুরুতে ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছিল ইসরাইল। সিএনএন'র তথ্যানুসারে, ৬ মে হামাস যে চুক্তিটি গ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছিল, সেটি পর্যালোচনার জন্য আমেরিকা এবং কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের পাঠানো প্রস্তাবটি ছিল না। সেটি হামাসের কাছে পাঠানোর আগে মিসরীয় গোয়েন্দারা পরিবর্তন করেছিলেন। আর এ বিষয়টিই মার্কিন, ইসরাইলি এবং কাতারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিদ্বেষের সৃষ্টি করে, যা পরে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছিল।