মমতার মন্তব্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিতর্ক

মমতার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে গত রোববার এবং পরে সোমবার আলাদা জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুসমাজ আক্রান্ত

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৪২ আসনের মধ্যে ১৭, অর্থাৎ ৪০ শতাংশ আসনে এখনো নির্বাচন বাকি। এ অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য ঘিরে রাজ্যের সম্ভবত সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচনী ইসু্য সামনে চলে এসেছে। পঞ্চম দফা নির্বাচনের দুই দিন আগে গত শনিবার নির্বাচনী জনসভায় মুর্শিদাবাদের এক হিন্দুধর্মীয় নেতাকে সরাসরি আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কার্তিক মহারাজ নামের ওই ব্যক্তি রাজনীতি করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত রোববার ও সোমবার দু'টি আলাদা জনসভায় বলেন, হিন্দুসমাজ, রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সংঘকে পশ্চিমবঙ্গে অপমান করা হচ্ছে। মোদির বক্তব্যের দ্রম্নত প্রতিক্রিয়া জানান মমতা। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী আবার কার্তিক মহারাজের নাম করে বলেন, সব সাধুসন্ন্যাসী নয়, নির্দিষ্ট ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে তার বক্তব্য রয়েছে। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা করে চার দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে জবাব চেয়েছেন কার্তিক মহারাজ। এ ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে বড় ধরনের চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। গত রোববার পঞ্চম দফার ৭ আসনে এ ঘটনার প্রভাব পড়েছে এবং বাকি ১৭ আসনেও পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মমতার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত গত শনিবার হুগলির গোঘাটে এক নির্বাচনী জনসভায় মমতা বলেন, 'সব সাধু সমান হয় না। আমাদের মধ্যেও কি আমরা সবাই সমান? এই যে বহরমপুরের এক মহারাজ আছেন, কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সংঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করি। আমার শ্রদ্ধার তালিকায় তারা দীর্ঘদিন ধরে আছেন। কিন্তু এই লোক বলেন, 'তৃণমূলের এজেন্ট বসতে দেব না।' ফলে তাকে আমি সাধু মনে করি না। কারণ তিনি সরাসরি রাজনীতি করে দেশের সর্বনাশ করছেন।' মমতার এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে গত রোববার এবং পরে সোমবার আলাদা জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুসমাজ আক্রান্ত। হিন্দুসমাজকে অপমান করা হয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘকেও তিনি আক্রমণ করেছেন। তৃণমূলের গুন্ডাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জলপাইগুড়িতে গত শনিবার রাতে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম আক্রান্ত হয়েছে। তার প্রশ্ন, ভারতে কেউ কি কখনো ভেবেছিলেন, মিশনের ওপরে হামলা হবে? ভোট ব্যাংকের রাজনীতি করতে গিয়ে তৃণমূল সেটাই করেছে। রামকৃষ্ণ মিশনের ওপরে আক্রমণ কেউ মেনে নেবেন না। প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য চুপ করে থাকেননি। বরং তিনি কার্তিক মহারাজ বা ভারত সেবাশ্রম সংঘের ওই সদস্য স্বামী প্রদীপ্তানন্দের বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও জোরালো করেন। তিনি পাল্টা কার্তিক মহারাজকে আক্রমণ করে বলেন, তিনি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা বলেননি এবং বলবেনও না। মমতা বলেন, 'আমি রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে নই। কয়েক দিন আগেই তো সেখানকার মহারাজ অসুস্থ ছিলেন, আমি দেখতে গিয়েছিলাম। আমি দু-একজনের সম্পর্কে কথা বলেছি, যাদের একজন কার্তিক মহারাজ। তিনি আমাদের এজেন্টকে বসতে দেননি।' রামকৃষ্ণ মিশন, বেলুড় মঠ ও ভারত সেবাশ্রম সংঘের সঙ্গে তার সম্পর্ক কতটা ভালো, তার কিছু উদাহরণ দিয়ে মমতা বলেন, 'ওরা সত্যিই খুব ভালো। আমাকে ভালবাসেন, আর মানুষের জন্য কাজও করেন।' স্বামী প্রদীপ্তানন্দ ওরফে কার্তিক মহারাজ মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে আক্রমণ করে বলেছেন, তিনি তার সম্মানহানি করেছেন। সেই কারণে মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমি ভারত সেবাশ্রম সংঘের একজন সন্ন্যাসী। অচেনা কেউ নই। প্রতিষ্ঠিত একজন সন্ন্যাসীর মানহানি করা হয়েছে, তাই আমি আইনের সাহায্য নিতে বাধ্য হয়েছি।' কার্তিক মহারাজ দীর্ঘদিন মুর্শিদাবাদ ও মধ্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঠপর্যায়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নির্বাচনে বরাবরই তার বড় ভূমিকা থাকে, এবারও ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হিন্দুত্ববাদী সনাতন ধর্মের পক্ষ নিয়ে নির্দিষ্ট দল বা প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেন। কার্তিকের রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে অনেকে মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে ভারত সেবাশ্রম সংঘেরও রাজনৈতিক ভূমিকা রয়েছে। ভারত সেবাশ্রম সংঘের তরফ থেকে অবশ্য তাদের সদর দপ্তরের মুখ্যসচিব স্বামী বিশ্বোনন্দ বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'গরিবদের জন্য কাজ করেন'। কার্তিক মহারাজ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যা বলেছেন, তা বলা উচিত হয়নি। এ মন্তব্য করার জন্য তিনি (কার্তিক মহারাজ) ভারত সেবাশ্রম সংঘের কাছে কোনো অনুমতি চাননি। বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখা হবে। সূত্র : বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম