হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি (৬৩) ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুলস্নাহিয়ানসহ ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ এসব নেতা নিহত হওয়ার পর সন্দেহের তির এখন ইসরাইলের দিকে। তবে এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে ইসরাইল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসরাইলের এক কর্মকর্তা রাইসি নিহতের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, 'এই দুর্ঘটনায় আমরা জড়িত নই।' তথ্যসূত্র : রয়টার্স, টাইমস অব ইনডিয়া রাইসি ইরানের কট্টরপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার নেতৃত্বে ১৯৮৮ সালে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। তার নেতৃত্বেই ইরানের সামরিক বাহিনী কিছুদিন আগে আঞ্চলিক বৈরিতার জের ধরে ইসরাইলের ভূখন্ডে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। রোববার (১৯ মে) ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এক পার্বত্য অঞ্চলে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসিসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনা ব্যাপক জল্পনার জন্ম দিয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাইসির মৃতু্যর রহস্য। যদিও ইরানের সরকারি ব্যাখ্যায় এখন পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম বলছে, ভারী বৃষ্টিপাত আর ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইটের দৃষ্টিসীমায় ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে এই দুর্ঘটনায় শত্রম্নপক্ষের জড়িত থাকার আশঙ্কা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে। তাতে সবার আগে আসছে ইসরাইলের নাম। ইসরাইল কি আসলেই জড়িত? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বের হয়ে এসেছে কিছু কারণ। ব্রিটিশ প্রভাবশালী সাময়িকী 'দি ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাইসির নিহতের ঘটনায় কিছু ইরানি ইসরাইলকে সন্দেহ করছেন। কেননা, দামেস্কে ইসরাইলের একজন ইরানি জেনারেলকে হত্যা ও পরে ইসরাইলে ইরানের শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ঘটনায় রাইসির ভূমিকা ছিল। এই সূত্র ধরে রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে অনেকেই যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। সন্দেহ করা হচ্ছে ইসরাইলের দুর্র্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে। চোরাগোপ্তা এবং নিখুঁত অভিযান চালানোর জন্য ব্যাপক পরিচিতি আছে তাদের। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় সন্দেহবাদীদের ইসরাইলি সংশ্লিষ্টতার তত্ত্ব নাকচ করে দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ইসরাইলকে সন্দেহ করা স্রেফ অর্থহীন। এতে ইরানিদের উসকে দেওয়া ছাড়া বিশেষ কোনো লাভ হবে না। বরং সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে বহুগুণ। এছাড়া ইসরাইল কখনও কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করার মতো এত দূর অগ্রসর হয়নি। তবে দ্বন্দ্বের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা এমন একটা সময় ঘটেছে; যখন আঞ্চলিক উত্তেজনা তুঙ্গে। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনজুড়ে ইরানের 'প্রক্সি নেটওয়ার্ক' পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। বিশেষ করে, ইসরাইল ও হামাসের চলমান যুদ্ধের মাঝে আঞ্চলিক এই পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। ইরানের নেতৃত্ব নিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলেই এসব গোষ্ঠী সংঘাতের দিকে এগোবে, এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আমরা জড়িত নই : ইসরাইলি কর্মকর্তা এদিকে, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃতু্যর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই দেশটির চিরবৈরী আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরাইলের রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সোমবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরাইলের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার সঙ্গে ইসরাইল জড়িত নয়। তিনি বলেছেন, 'দুর্ঘটনার পেছনে আমরা নেই।' তবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুলস্নাহিয়ানের মৃতু্যতে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলি সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইসরাইলের বিরোধী দল বেতেনু পার্টির চেয়ারম্যান এম কে আভিগদোর লিবারম্যান বলেছেন, রাইসির মৃতু্য এই অঞ্চলে ইরানের নীতিতে কোনো পার্থক্য আনবে বলে ইসরাইল আশা করে না। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম 'ওয়াইনেইট'কে তিনি বলেছেন, 'আমাদের জন্য, এটা কোনো বিষয় নয়। এই ঘটনা ইসরাইলের (ইরানের প্রতি) মনোভাবে কোনো প্রভাব ফেলবে না। ইরানের নীতি দেশটির সর্বোচ্চ নেতার (আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি) মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।' তিনি বলেন, 'ইরানের প্রেসিডেন্ট যে একজন নিষ্ঠুর লোক ছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা তার জন্য একফোঁটা চোখের পানিও ফেলব না।' ইসরাইলের অতি-রক্ষণশীল নোয়াম পার্টির নেতা এম কে আভিগদোর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, 'এক মাসেরও কম সময় আগে তিনি (রাইসি) হুমকি দিয়েছিলেন যে, ইসরাইল আক্রমণ চালালে তাদের কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আর এখন তিনিই ইতিহাসের ধূলিকণা।'