ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর জাবালিয়ার সরু গলিপথগুলোতে হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরাইলি বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। আর দক্ষিণে রাফাহর চারপাশে জড়ো হওয়া ইসরাইলি ট্যাংকগুলোতে হামাসের যোদ্ধারা হামলা চালিয়েছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গাজার ঐতিহাসিক আটটি শরণার্থী শিবিরের মধ্যে বৃহত্তম জাবালিয়ার কেন্দ্রস্থলের বাজার এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর সাঁজোয়া বহর ঢুকে পড়েছে, তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বুলডোজারগুলো বাড়ি, দোকানসহ যা পড়ছে, সব গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি
ইসরাইল জানিয়েছিল, গাজা যুদ্ধের প্রথমদিকেই তাদের বাহিনী জাবালিয়া পরিষ্কার করে ফেলেছিল, কিন্তু হামাসের যোদ্ধাদের ফের সংঘটিত হওয়ার প্রচেষ্টা রুখে দিতে গত সপ্তাহে আবার তাদের বাহিনী সেখানে ফিরেছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে তাদের সেনারা জাবালিয়ায় ৬০ জনের বেশি হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং একটি 'ডিভিশনাল পর্যায়ের অভিযানে' অস্ত্র গুদাম খুঁজে পেয়েছে। ডিভিশনাল পর্যায়ের অভিযানে সাধারণত কয়েক হাজার সেনা সংবলিত বেশ কয়েকটি ব্রিগেড অংশ নিয়ে থাকে, এতে এটি গাজা যুদ্ধের অন্যতম বৃহত্তম অভিযানের রূপ নিয়েছে। আইডিএফ বলেছে, সপ্তম ব্রিগেডের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বহু বিমান হামলা পরিচালনা করেছে, এতে শত্রম্নরা ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি তাদের অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
মিসরের সীমান্তবর্তী রাফাহর আকাশে ঘন ধোঁয়ার কুন্ডলি উঠছিল। এখানে বাড়তে থাকা ইসরাইলি হামলার কারণে শহরটি থেকে কয়েক লাখ মানুষ পালিয়ে গেছে। গাজার অপেক্ষাকৃত নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল রাফাহ। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র জিনস লার্কে বলেছেন, লোকজন আতঙ্কিত হয়ে আছে আর পালানোর চেষ্টা করছে। তিনি জানান, ইসরাইলের নির্দেশ অনুযায়ী, অধিকাংশ বাসিন্দা উত্তর দিকে উপকূলের দিকে সরে যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতো কোনো নিরাপদ সড়ক বা গন্তব্য নেই।
শুক্রবার ইসরাইলি ট্যাংক ও যুদ্ধবিমানগুলো রাফাহর কয়েকটি অংশে বোমাবর্ষণ করেছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডস ও তাদের মিত্র ইসলামিক জিহাদ জানিয়েছে, রাফাহর পূর্বদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং মিসরের সঙ্গে সীমান্ত ক্রসিংয়ের ভেতর জড়ো হওয়া ইসরাইলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে তারা ট্যাংক বিধ্বংসী গোলা ও মর্টারের গোলা ছুড়েছে।
দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হামাস
এদিকে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতার মধ্যেই সেখানে দীর্ঘমেয়াদে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। এই সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডসের মুখপাত্র আবু উবেইদা। শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় আবু উবেইদা বলেন, 'আমাদের জনগণের ওপর গত কয়েক মাস ধরে যে নির্মম আগ্রাসন চলছে, তা বন্ধের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ এবং একই সঙ্গে শত্রম্নদের সঙ্গে গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াই চালিয়ে যেতেও আমরা প্রস্তুত।'
ভিডিও বার্তায় আল-কাসাম ব্রিগেডসের এই মুখপাত্র দাবি করেন, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হামাসের যোদ্ধারা ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে ব্যাপক বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করছে। এরই মধ্যে ইসরাইলি বাহিনীর যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সাধনেও সফল হয়েছে তারা। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য প্রকাশ করছে না।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর রাফাহতে অভিযান শুরু করেছে আইডিএফ। সেখানেও ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের তীব্র সংঘাত চলছে বলে দাবি করেছেন আবু উবাইদা। ভিডিও বার্তায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'গত ১০ দিনে পুরো গাজা উপত্যকায় অন্তত ১০০ ইসরাইলি সামরিক সাঁজোয়া যানকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে আল-কাসাম ব্রিগেডসের যোদ্ধারা। রাফাহ শহরে আমাদের যোদ্ধাদের সঙ্গে আগ্রাসনকারী বাহিনীর তীব্র লড়াই হচ্ছে এবং শহরের পূর্বাঞ্চলে শত্রম্নরা পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে।'
তিন 'জিম্মির' মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানাল ইসরাইল
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজা থেকে তিন 'জিম্মির' মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত ৭ অক্টোবর হত্যা করার পর তাদের মৃতদেহ গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ইসরাইলি বাহিনীর। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামাসের একটি টানেলে মৃতদেহগুলো পাওয়া গেছে।
তিন জিম্মির মৃতদেহ পাওয়ার খবরটিকে 'হৃদয় বিদারক' বলে অভিহিত করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, 'আমরা আমাদের জীবিত ও মৃত, সব জিম্মিকে একই রকমভাবে ফিরিয়ে আনবো।'
এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, রাতে চালানো এক অভিযানে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। গাজা থেকে যাদের ধরা হয়েছে, তাদের 'জিজ্ঞাসাবাদ করে' পাওয়া তথ্যে ভিত্তিতে অভিযানটি চালানো হয়।