সহযোগিতার আশ্বাস

চীনে পুতিন, তীক্ষ্ন দৃষ্টি পশ্চিমা বিশ্বের

পুতিনের সফর আমেরিকার দুই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর করবে

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বেইজিংয়ে ভস্নাদিমির পুতিন ও শি জিনপিং
দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে পৌঁছেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছান তিনি। এ সময় জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় পুতিনকে। বেইজিং বিমানবন্দরে পুতিনকে স্বাগত জানান চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এ যাত্রায় পুতিনের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, সদ্য নিযুক্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ এবং রুশ নিরাপত্তা পরিষদের সচিব সের্গেই শোইগু-ও রয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়াকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন শি জিনপিং। এমন পরিস্থিতিতে চীন-রাশিয়ার দুই নেতার নতুন বৈঠকের দিকে তীক্ষ্ন নজর রাখছে পশ্চিমা বিশ্ব। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা 'সিনহুয়া' পুতিনের আগমনের বিষয়টি নিশ্চিত করে 'পুরনো বন্ধুর' রাষ্ট্রীয় সফর হিসেবে বর্ণনা করেছে। পুতিনের এই সফর আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে, ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানে কয়েক হাজার সেনা পাঠানোর কয়েকদিন আগে বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন পুতিন। সে সময় চীন ও রাশিয়া 'সীমাহীন' অংশীদারিত্বের ঘোষণা করেছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার এই অভিযান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে মারাত্মক স্থলযুদ্ধের সূত্রপাত করে। নতুন মেয়াদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফরের জন্য চীনকে বাছাই করেছেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত বিশ্বকে তার অগ্রাধিকার এবং শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কতটা শক্তিশালী, সে বার্তাই যেন দিচ্ছে। সফরকালে পুতিন বৃহস্পতিবার শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মুখোমুখি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। বৈঠকে পারস্পরিক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দুই দেশের সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করবেন তারা। আজ (শুক্রবার) চীনের ঐতিহাসিক শহর হারবিনে দুটি দ্বিপক্ষীয় ব্যবসায়িক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে পুতিনের। সেই সঙ্গে সেখানে একটি বরফ উৎসবেও যোগ দেবেন তিনি। ইউক্রেনের ওপর হামলার কারণে পশ্চিমা বিশ্ব কার্যত একঘরে করে রাখলেও রাশিয়ার কিছু বন্ধু এখনো রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সমর্থন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের ওপর সে দেশের নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। চীন সফরের ঠিক আগে সে দেশের 'সিনহুয়া' সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৭১ বছর বয়সি পুতিন চীনের প্রেসিডেন্টের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জাতীয় স্বার্থ ও গভীর পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে শি যেভাবে রাশিয়ার সঙ্গে 'কৌশলগত' সহযোগিতা গড়ে তুলেছেন, এর প্রশংসা করে পুতিন বলেন, সে কারণেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবার কার্যভার গ্রহণের পর তিনি প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে চীনকেই বেছে নিয়েছেন। তিনি শিল্প, উচ্চপর্যায়ের শিল্প, মহাকাশ, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, এআই, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির উৎস ও অন্যান্য উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে আরও নিবিড় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার উদ্যোগ নিতে চান। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পুতিনের সফরের সময় বড় উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রেও চীনের উদ্যোগ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন পুতিন। তার মতে, বর্তমান এই সংকট সম্পর্কে শি জিনপিং-এর প্রকৃত ধারণা রয়েছে। তবে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা জগতের কড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চীন সে দেশকে সরাসরি অস্ত্র পাঠায়নি। গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন বেইজিং সফরে গিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে চীনকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। চীন ও রাশিয়া প্রকাশ্যে অ্যামেরিকার 'আধিপত্য' নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বেইজিং চীনের কোম্পানিগুলোর ওপর পশ্চিমা জগতের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমারেখা মেনে চলার চেষ্টা করছে। নিষেধাজ্ঞার ভয়ে চীনের ব্যাংকগুলোও রাশিয়ার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে শুরু করেছে। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে রাশিয়ায় চীনের রপ্তানিও কমে গেছে। গত ডিসেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার দায়ে তৃতীয় দেশের ব্যাংকগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর নির্বাহী আদেশ দেওয়ার পর চীনসহ কিছু দেশ অস্বস্তিতে পড়েছে। চীনের কিছু কোম্পানি এরই মধ্যেই সমস্যার মুখে পড়েছে।