দুই বাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ

নতুন অস্ত্র আসার আগেই ইউক্রেনের জমি দখলে মরিয়া রাশিয়া

খারকিভের কাছে রুশ বাহিনীর 'তাৎপর্যপূর্ণ' অগ্রগতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগুকে সরিয়ে দিলেন পুতিন

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভস্নাদিমির পুতিন ও সের্গেই শোইগু -ফাইল ছবি
আমেরিকা থেকে যথেষ্ট অস্ত্র হাতে পাওয়ার আগেই ইউক্রেনের দুর্বলতার সুযোগের সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করছে রাশিয়া। এখন পর্যন্ত মূলত ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্ব প্রান্তে সামরিক তৎপরতা চালানোর পর মস্কো এবার নতুন জায়গায় হামলা শুরু করেছে। গত শুক্রবার থেকে উত্তর-পূর্বে খারকিভ অঞ্চলে যতটা সম্ভব জমি দখল করতে বড় অভিযান শুরু করেছে রুশ সেনাবাহিনী। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ভোভচানস্ক শহরের উপকণ্ঠে দুই বাহিনীর মধ্যে জোরালো সংঘর্ষ চলছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, ডিডাবিস্নউ নিউজ, বিবিসি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, অগ্রসর হওয়ার ২২টি প্রচেষ্টার মধ্যে ১৪টি ক্ষেত্রে রুশ বাহিনী কিছু 'কৌশলগত সাফল্য' পাচ্ছে। নিজস্ব সেনাদের প্রাণহানি উপেক্ষা করে রুশ বাহিনী বেপরোয়া অভিযান চালাচ্ছে। ইউক্রেনের দাবি, কমপক্ষে ১০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে। তবে ভোভচানস্ক শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার পরস্পরবিরোধী দাবি শোনা যাচ্ছে। রোববার রাশিয়া জানিয়েছে, আরও চারটি গ্রাম তাদের দখলে এসে গেছে। রুশ বাহিনীর এমন বড় আকারের অভিযানের মুখে নিরীহ মানুষের উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবীরা আক্রান্ত এলাকার মানুষদের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ এলাকায় চলে যাওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন। গত কয়েক দিনে প্রায় ছয় হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে খারকিভের গভর্নর জানিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দৈনিক ভিডিও বার্তায় খারকিভ অঞ্চলের গ্রামগুলোতে 'রক্ষণাত্মক সংঘর্ষ'র উলেস্নখ করেছেন। তবে তার মতে, সেখানে সংঘর্ষের মাত্রা দনিয়েৎস্ক অঞ্চলের মতো এত তীব্র নয়। উলেস্নখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরু করার সময় রাশিয়ার সেনাবাহিনী খারকিভ শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছে গিয়েছিল। জোরালো প্রতিরোধের মুখে তারা আবার সীমান্তে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এই মুহূর্তে বাসিন্দারা শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন না। খারকিভের মেয়র ইগর তেরেখভ বলেন, শহর আপাতত শান্ত রয়েছে। খারকিভের কাছে রুশ বাহিনীর তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়ার সেনাবাহিনী কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি করেছে। এই অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা দুর্বল। শুক্রবার খারকিভ সীমান্তে রাশিয়া নতুন স্থল হামলা শুরুর পর এই অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক 'ইন্সটিটিউট অব স্টাডি অব ওয়ার' (আইএসডাবিস্নউ)-এর এক সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় এই পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে। শনিবার আইএসডাবিস্নউ নিজেদের পর্যালোচনায় বলেছে, খারকিভের উত্তরাঞ্চলে ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তের কাছে সীমিত আকারের আক্রমণ অভিযান পরিচালনা করছে রুশ সেনাবাহিনী। ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা দুর্বল থাকা অঞ্চলগুলোতে কৌশলগত অগ্রগতি পাচ্ছে তারা। শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সীমান্তে বেশ কয়েকটি গ্রাম দখল করেছে রুশ সেনারা। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে বরিসিভকা, ওহিরস্তেভ ও পেস্নতেনিভকা। ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান কর্নেল জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরস্কি রোববার বলেছেন, 'আমাদের ভূখন্ডের গভীরে প্রবেশের লক্ষ্য নিয়ে শত্রম্ন সেনারা বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করছে। প্রতিরক্ষা বাহিনী তুমুল রক্ষণাত্মক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।' শনিবার আইএসডাবিস্নউ বলেছে, খারকিভ শহরের অবস্থান সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ার কারণে রাশিয়ার সীমিত কৌশলগত অগ্রগতির তাৎপর্য বেড়ে গেছে। অবশ্য রুশ সেনারা এখনো তেমন অগ্রগতি অর্জন করেনি যাতে খারকিভ শহর নিয়মিত কামানের গোলাবর্ষণের হুমকিতে থাকবে। খারকিভের আঞ্চলিক কর্মকর্তারা বলেছেন, সীমান্তের ভোভচানস্ক শহরসহ বিভিন্ন স্থানের রাশিয়ার গোলাবর্ষণ ও হামলা তীব্র হয়েছে। খারকিভ হলো ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। সীমান্তবর্তী অঞ্চলটি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত রুশ হামলার শিকার হচ্ছে। শুক্রবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ভোভচানস্ক গ্রামে রাশিয়া বিমান হামলা চালিয়েছে এবং সাঁজোয়া যান নিয়ে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ভেদ করার চেষ্টা করেছে। সেখানে রিজার্ভ সেনা পাঠানো হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কে মনোযোগী ছিল রাশিয়া। যে চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে নিজেদের বলে ঘোষণা করেছে, সেগুলোর একটি হলো দোনেৎস্ক। যদিও পুরো অঞ্চলটি তারা দখলে নিতে পারেনি। গত ফেব্রম্নয়ারিতে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইউক্রেনীয় শহর আভদিভকা দখল করেছিল রুশ সেনাবাহিনী। এরপর থেকে তারা আভদিভকার পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রায় এক বছর আগে দখল করা বাখমুতের পশ্চিম দিকেও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সরিয়ে দিলেন পুতিন এদিকে, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সের্গেই শোইগুকে সরিয়ে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। এছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নতুন একজনের নামও প্রস্তাব করা হয়েছে। অবশ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরানো হলেও সের্গেই শোইগুকে পাঠানো হচ্ছে অন্য দায়িত্বে। তাকে এখন রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান নিযুক্ত করা হবে। আর এরই মধ্যে শোইগুর জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভকে (৬৫)। পুতিন প্রতিরক্ষা বাজেটের আরও সার্থক ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।