গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতা

এবার সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জন ভার্জিনিয়ায়

শিক্ষার্থীরা গাউন ও টুপি পরা অবস্থায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের কক্ষ থেকে বের হয়ে যান বিক্ষোভ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আমেরিকার ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ডজন শিক্ষার্থী তাদের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিকে সমাবর্তনে বক্তা করায় শিক্ষার্থীরা ওই অনুষ্ঠান বর্জন করেন। ওই বক্তা এর আগে শিক্ষার্থীদের চলমান বিক্ষোভ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন পোস্টে দেখা গেছে, ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভিসিইউ) শিক্ষার্থীরা গাউন ও টুপি পরা অবস্থায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের কক্ষ থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। আমেরিকার ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলের গভর্নর গেস্নন ইয়ংকিন তখন সমাবর্তন অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দিচ্ছিলেন। ইয়ংকিনকে সমাবর্তনের বক্তা করার বিষয়টিই শিক্ষার্থীদের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। কারণ তিনি গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ডাকা প্রতিবাদ কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন। এ ছাড়া ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন বর্ণবাদ বিষয়ক একটি পাঠ্যক্রম চালু করার কথা ভাবছিল, তখন সেটির বিরোধিতা করার কারণেও ইয়ংকিন সমালোচিত হয়েছিলেন। অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওতে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের স্স্নোগান দিতে দেখা গেছে, যেখানে তারা বলছেন, 'প্রকাশ করো, সরে যাও। আমরা থামব না, আমরা বিশ্রাম নেব না।' ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী সমাবর্তন বর্জন করেছেন, তাদের একজন হচ্ছেন শিরিন হাদাদ। শনিবার তিনি 'বিবিসি'কে বলেন, সমাবর্তনের স্বাগত বক্তব্য শুরু করার পর বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা এত জোরে তালি বাজাতে শুরু করেন, অন্যরা ইয়ংকিনের কোনো কথাই শুনতে পাচ্ছিলেন না। এরপর অন্তত ১৫০ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে সমাবর্তন কক্ষ থেকে বের হয়ে যান বলেও জানান হাদাদ। তাতে অবশ্য ইয়ংকিন তার স্বাগত বক্তব্য থামাননি। অনুষ্ঠান শেষে তিনি সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টও দিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীরা যেভাবে সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন, সে বিষয়ে তাকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়নি। গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। দেশটিতে কমপক্ষে ১৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। ইসরাইলের সঙ্গে থাকা আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও জানিয়েছেন তারা। গত এপ্রিলের মাঝামাঝি শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ-কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে ২৯ এপ্রিল ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়েরই অন্তত ছয়জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এখন আমেরিকার কলাম্বিয়া ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান এই বিক্ষোভ সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকর্তারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। গত শুক্রবার ভোরে 'ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি' (এমআইটি) কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে বিক্ষোভকারীদের তাঁবু তুলে দিয়েছে। তখন বেশকিছু শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। বিক্ষোভকারীদের তাঁবু তুলে দেওয়ার আগে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে বিক্ষোভকারী কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে এমআইটি কর্তৃপক্ষ। তারা শিক্ষা কার্যক্রম ও স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে এমআইটির সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে তারা অনড়। এদিকে, আমেরিকার আরেক নামি প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে তারা সাময়িক বহিষ্কার শুরু করেছে। বিক্ষোভ থামাতে কয়েকদিন আগে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমেরিকার ৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে প্রায় দুই হাজার ৯০০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে, ইহুদি বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে ক্যাম্পাসে সশরীরে ক্লাস নেওয়া বন্ধ রাখার মতো সিদ্ধান্তও নিতে দেখা যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেসহ অন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে, বিক্ষোভ বন্ধ করে ক্যাম্পাসকে শান্ত রাখার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের ওপর দিন দিন চাপ বাড়ছে।