গাজায় আগ্রাসন

রাফাহ ক্রসিংয়ের দখল নিল ইসরাইল

যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত, রাফাহ অভিযান চালিয়ে যাবে ইসরাইল! রাফাহতে ইসরাইলি হামলা মানে আরও মানবিক বিপর্যয় :জাতিসংঘ

প্রকাশ | ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গাজা থেকে মিসরে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাফাহ ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেখানে ট্যাংক মোতায়েন করে ইসরাইলি বাহিনী। মঙ্গলবার সকালে ইসরাইলের ৪০১তম আর্মড ব্রিগেড পূর্ব রাফাহর সালাহ-আল-দিন ক্রসিংটিকে রাস্তা থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় -রয়টার্স অনলাইন
আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুদ্ধবিরতির আবেদন জানিয়েছিল। একই পরামর্শ দিয়েছিল জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনও। কিন্তু সব আবেদন উড়িয়ে দিয়ে গাজা ভূখন্ডের দক্ষিণে রাফাহতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের শেষ ঠিকানায় স্থলপথে হামলা শুরু করেছে ইসরাইলি সেনারা। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে আইডিএফ। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সোমবার রাতে আইডিএফের সেনারা রাফাহ ক্রসিংয়ের গাজা অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এই মুহূর্তে ক্রসিংয়ের যাবতীয় অপারেশনাল কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে আমাদের সেনারা। ক্রসিংয়ের আশপাশে সন্ত্রাসীদের কোনো গোপন আস্তানা রয়েছে কিনা, এর অনুসন্ধান করছে। এই অনুসন্ধান শুধু ক্রসিংয়ের গাজা অংশে চলছে।' গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত রাফাহ ক্রসিংয়ের একপাশে গাজা, অন্যপাশে মিসরের সিনাই উপদ্বীপ। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখন্ডে হামাসের হামলা এবং এর জবাবে গাজায় আইডিএফের অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত এই সীমান্ত পথটিকে গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জন্য 'লাইফ লাইন' বলে বিবেচনা করা হতো। কারণ, এই সীমান্তপথ দিয়েই খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানিসহ জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর সরবরাহ প্রবেশ করত গাজায়। তবে ৭ অক্টোবরের পর থেকে সীমান্তপথটি বন্ধ করে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। মাঝে মাঝে ত্রাণের গাড়ি প্রবেশের জন্য খুললেও গত ৭ মাসের অধিকাংশ সময় বন্ধই থেকেছে রাফাহ ক্রসিং। এদিকে, পুরো উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলি বাহিনীর ব্যাপক বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে রাফাহ শহরে জড়ো হয়েছিলেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। অনেকে ক্রসিংয়ের কাছাকাছি এলাকায় তাঁবু গেড়ে অস্থায়ীভাবে বসবাসও করছিলেন। এক মাসের বেশি সময় আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। তবে নেতানিয়াহু এই ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পর্যন্ত একাধিকবার রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানের ব্যাপারে নেতানিয়াহুকে নিষেধ করেছিলেন। ইসরাইলি বাহিনী অভিযান শুরু হলে রাফাহতে বেসামরিক নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে এবং যুদ্ধে ছড়িয়ে পড়বে- এমন আশঙ্কা থেকেই এই নিষেধ করেছিলেন বাইডেন। কিন্তু নেতানিয়াহু, তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা এবং আইডিএফ সেই নিষেধে কর্ণপাত করেনি। সোমবার সকাল থেকে রাফাহতে বিমান অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। সেই অভিযানে ১৬ জন নিহত হন। অভিযান শুরুর আগে অবশ্য এক লাখের বেশি মানুষকে রাফাহ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল ইসরাইলি বাহিনী। আইডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেসামরিক লোকজন নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে রাফাহ ছাড়ার পর সেখানে অভিযান চালিয়েছে সেনারা। 'অ্যাসোসিয়েট প্রেস এজেন্সি' (এপি) জানিয়েছে, রাতের বেলা ইসরাইলের বেশকিছু ট্যাংক রাফাহ সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। তাদের যুদ্ধবিমানগুলো রাফাহর আবাসিক ভবনগুলোতে আঘাত হানছিল। রাফাহ সীমান্তের ফিলিস্তিন অংশ নিজেদের দখলে নিয়েছে ইসরাইল। গাজা বর্ডার ক্রসিংয়ের এক মুখপাত্র হিশাম এদওয়ান বলেন, রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ হয়ে গেলে গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের মৃতু্য ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না। অবরুদ্ধ রাফাহ শহরে প্রবেশ ও মিসরে যাতায়াতের একমাত্র পথ এই ক্রসিং। এই ক্রসিং দিয়েই ত্রাণ সাহায্য পৌঁছায় গাজায়। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস সোমবার জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। তবে ইসরাইল বলেছে, প্রস্তাবটি তাদের শর্তগুলো পূরণ করেনি। এরপরই নতুন করে রাফাহ শহরে অভিযান শুরু করে তারা। যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত, রাফাহ অভিযান 'চালিয়ে যাবে' ইসরাইল এর আগে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু ইসরাইল বলছে, এর শর্তগুলো তাদের দাবি অনুযায়ী হয়নি আর তারা রাফাহতে সামরিক অভিযান নিয়ে এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের প্রধান নেতা ইসমাইল হানিয়া কাতারের প্রধানমন্ত্রী এবং মিসরের গোয়েন্দা প্রধানকে তাদের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবগুলো ইসরাইলের দাবি পুরোপুরি পূরণ করতে পারেনি। এরপরও চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টায় মধ্যস্থতকারীদের সঙ্গে বৈঠক করতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে তারা।