স্থল অভিযান আসন্ন

ফিলিস্তিনিদের রাফাহ ছাড়তে বলল ইসরাইল

ইসরাইলি বাহিনীর নির্দেশের পর পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ হামাসের হামলায় ইসরাইলের তিন সেনা নিহত, পাল্টা বিমান হামলায় শিশুসহ নিহত ১৯

প্রকাশ | ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাফাহ ছেড়ে পালাচ্ছেন আতঙ্কিত ফিলিস্তিনিরা
ফিলিস্তিনি নাগরিকদের রাফাহ শহর ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহতে পরিকল্পিত স্থল হামলা 'আসন্ন' বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত। মধ্য গাজার নেটজারিম করিডরে ইসরাইলি সেনা সদস্যদের তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেছেন, 'আমরা উদ্বেগজনক যেসব লক্ষণ লক্ষ্য করছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে- হামাস আমাদের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে চায় না। এর মানে রাফাহতে সেনা অভিযান আসন্ন।' তার এই ঘোষণার পরই হাজার হাজার ফিলিস্তিনি আবারও মধ্য ও উত্তর গাজার দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ অঞ্চল গাজায় দীর্ঘ সাত মাস ধরে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। তেল আবিবের একের পর এক হামলায় এরই মধ্যে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে অঞ্চলটি। দীর্ঘ এই সময়ে গাজার বিভিন্ন অঞ্চল ইসরাইলি বর্বরতায় আক্রান্ত হলেও 'কিছুটা রেহাই' ছিল রাফাহ শহরে। তবে সম্প্রতি লাখ লাখ জনগোষ্ঠীর আশ্রয়স্থল এই শহরে হামলা 'আসন্ন' বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত। সোমবার এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, 'বেসামরিকদের ধীরে ধীরে ওই নির্দিষ্ট এলাকা ছেড়ে যেতে উৎসাহিত করতে' পোস্টার, এসএমএস, ফোন কল ও গণমাধ্যমে ঘোষণা ব্যবহার করবে তারা। তবে তারা রাফাহর বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি বলে জানিয়েছে। 'সীমিত পরিসরের' স্থল অভিযানের জন্য রাফাহর এক লাখ বাসিন্দাকে সরিয়ে নিতে হবে বলে হিসাব করেছে বাহিনীটি। ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু 'হামাসের বাকি ব্যাটালিয়নগুলোকে' পরাজিত করতে রাফাহ আক্রমণ করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। টানা সাত মাস ধরে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যে ১৪ লাখের বেশি বাস্তচু্যত ফিলিস্তিনি এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। মূলত রাফাহ হলো গাজা উপত্যকার শেষ অবশিষ্ট এলাকা, যেখানে ইসরাইল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাতে তার সেনাদের প্রবেশের ঘোষণা দেয়নি। গ্যালান্ত বলেছেন, 'এই যুদ্ধের জন্য আমাদের স্পষ্ট লক্ষ্য রয়েছে- আমরা হামাসকে নির্মূল এবং গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তির জন্য প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। আমরা চুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়েছি...।' এর আগে ইসরাইলি সম্প্রচার মাধ্যম 'আর্মি রেডিও' জানিয়েছে, রাফাহতে হামলা শুরুর আগে ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী। কিন্তু দেশটির সামরিক বাহিনী এ তথ্য নিশ্চিত করেনি। আর্মি রেডিও জানিয়েছে, লোকজনকে সরিয়ে রাফাহর প্রান্তীয় কিছু এলাকায় নেওয়া হবে, সেখান থেকে তাদের খান ইউনিস ও আল মুওয়াসির নিকটবর্তী তাঁবুর শহরে নিয়ে যাওয়া হবে। হামাসের রকেট হামলায় তিন ইসরাইলি সেনা নিহত ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রকেট হামলায় তিন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। হামাসের সশস্ত্র শাখা 'আল-কাসাম ব্রিগেডস' জানিয়েছে, তারা কেরেম শালোম ক্রসিংয়ে হামলা চালিয়েছে এবং স্বল্পপালস্নার রকেট দিয়ে তারা ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, কেরেম শালোম থেকে প্রায় ৩.৬ কিলোমিটার দক্ষিণে গাজার রাফাহ ক্রসিংয়ের কাছে একটি এলাকা থেকে ১০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর প্রতিশোধ হিসেবে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ইসরাইলি বাহিনী ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে আট শিশুসহ অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোববার দিবাগত মধ্যরাতের ঠিক আগে রাফাহ শহরের দুটি বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় শিশুসহ ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী পাল্টা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা বলেছে, তারা সেই রকেটটিকে আঘাত করেছে, যেটা থেকে হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে সেখানে হামাসের সামরিক কাঠামোতেও আঘাত করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এদিকে, মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তির জন্য চুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২ দিনব্যাপী আলোচনা করেছে। এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, সর্বশেষ রাউন্ডের এই আলোচনা রোববার শেষ হয়েছে এবং তাদের প্রতিনিধিদল এখন হামাস নেতৃত্বের সঙ্গে পরামর্শ করতে কায়রো থেকে কাতারে যাবে। হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে দুর্বল করার জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অভিযুক্ত করেছেন। হানিয়াহ রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, 'হামাস এখনো একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী, যা আগ্রাসনের অবসান ঘটাবে, ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দেবে এবং বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি নিশ্চিত করবে।'