গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি করতে কায়রোতে শনিবার থেকে যুদ্ধবিরতি আলোচনা আবার শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রচেষ্টা জোরদার হলেও আবারও বেঁকে বসেছে হামাস। তারা বলেছে, যুদ্ধবিরতির জন্য সবশেষ যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, সেটি পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিনিধি দলটি 'ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি' নিয়েই সেখানে গেছে। সংগঠনটি বলেছে, 'ফিলিস্তিনিদের দাবি পূরণের জন্য একটি চুক্তি করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।' তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বলেছে, গাজায় যুদ্ধের অবসান ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে না তারা। তথ্যসূত্র : বিবিসি, এএফপি
এর আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, যদিও ইসরাইলের সঙ্গে হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে এবং যে কোনো সময় এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসতে পারে বলে দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা শনিবার গভীর রাতে জোর দিয়ে জানিয়েছেন, হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতির এমন কোনো প্রস্তাবে 'কোনো পরিস্থিতিতেই একমত হবে না' যেটাতে স্পষ্টভাবে যুদ্ধের সম্পূর্ণ সমাপ্তির কথা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের ওই কর্মকর্তা 'গাজায় আগ্রাসন বন্ধের বিষয়টি যুক্ত না করে' কেবল বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে চুক্তি করার বিষয়ে ইসরাইলি প্রচেষ্টার নিন্দাও করেছেন।
হামাসের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, 'হামাস কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো চুক্তিতে সম্মত হবে না, যেটাতে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান এবং পুরো গাজা উপত্যকা থেকে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহার ছাড়া কোনো চুক্তিই হবে না।'
এর আগে ইসরাইলের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা শনিবার জানান, যুদ্ধের অবসান ঘটানোর যে দাবি হামাস করছে, তা চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য বারবারই গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে নতুন সামরিক অভিযানের কথা বলে আসছেন, এমনকি চুক্তি হলেও। ইসরাইলি মিডিয়া যে খবর দিচ্ছে, তাতে নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনার শুরু হলেও দেশটির অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। তবে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ও সামরিক সহযোগী আমেরিকা নতুন কোনো অভিযানের পক্ষে নয়, যেখানে বিরাট সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক হতাহতের আশঙ্কা থাকছে।
হামাস ও ইসরাইলের দুই কর্মকর্তার বক্তব্য, এমন এক সময় সামনে এলো, যখন প্রায় সাত মাসের যুদ্ধে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শনিবার হামাসের আলোচকরা মিসরে গেছেন। ইসরাইলি কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, বন্দি চুক্তির কাঠামোর বিষয়ে 'ইতিবাচক ইঙ্গিত' পেলেই কেবলমাত্র তারা কায়রোতে প্রতিনিধি দল পাঠাবেন, যদিও এমন কিছু এখনো ঘটেছে বলে মনে হয়নি।
যুক্তরাজ্যের প্রকাশিত বিবরণ অনুসারে, সম্ভাব্য একটি চুক্তির প্রস্তাবের বিষয়ে হামাসের জবাবের জন্য অপেক্ষা করছেন মিসর, কাতার এবং আমেরিকার মধ্যস্থতাকারীরা। এই চুক্তি হলে ৪০ দিনের জন্য যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং ইসরাইলি কারাগারে ফিলিস্তিনিদের বন্দিদের সঙ্গে গাজায় আটক বন্দিদের বিনিময় করা হবে।
অবশ্য হামাস কর্মকর্তা শনিবার গভীর রাতে জানিয়েছেন, 'কোনো ধরনের অগ্রগতি' ছাড়াই এদিনের আলোচনা শেষ হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, 'হামাস এই চুক্তিটিতে 'সম্পূর্ণ এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির চুক্তি' বলে একটি সুস্পষ্ট এবং পরিষ্কার বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে অনুরোধ করেছে এবং ইসরাইল এখন পর্যন্ত এই বিষয়টি মানেনি।'
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন বলেছেন, হামাসের জন্য 'যুদ্ধবিরতি গ্রহণ করা উচিত নয়।' তবে প্রস্তাবে এখনো এমন কিছু রয়েছে, যাতে একমত হতে পারছে না হামাস।
\হযুদ্ধবিরতি চুক্তিটি স্থায়ী বা অস্থায়ী হবে কিনা, তা নিয়েই মূল সমস্যা বলে মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ এই আলোচনায় অংশ নিতে কায়রো সফর করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আ্যান্টনি বিস্নংকেন ও মার্কিন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)-এর পরিচালক উইলিয়ামস বার্নস।