গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ
বিক্ষোভ থেকে প্রায় দুই হাজার জনকে আটক করেছে মার্কিন পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ
প্রকাশ | ০৬ মে ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পর বেশ কয়েকটি দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে ইসরাইলবিরোধী আন্দোলন। গত মাস থেকে দেশটির কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে তা দেশটির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে বিস্তৃত হতে শুরু করে। তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স
আমেরিকা : চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল থেকে আমেরিকার অন্তত ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরাইলবিরোধী আন্দোলন চলছে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু হয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, এমোরি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, বোস্টনের এমারসন ইউনিভার্সিটি, কানেকটিকাটের ইয়েল ইউনিভার্সিটি, সিয়াটলে হাই স্কুলের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার মতো এই বিক্ষোভ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার জনকে আটক করেছে মার্কিন পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাঁবু ভেঙে দেওয়া, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, লাঠিচার্জ ও রাসায়নিক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এদিকে, এ বিষয়ে শেষমেশ মুখ খুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে তার বক্তব্য, শান্তির কোনো আশ্বাস মেলেনি। তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, দেশের শৃঙ্খলা অবশ্যই সবার আগে প্রাধান্য পাবে।
যুক্তরাজ্য : গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের শুরু থেকেই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ হচ্ছে। তবে আমেরিকার দেখাদেখি সেই বিক্ষোভ নতুন গতি পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিক্ষোভকারীরাও এখন ক্যাম্পাসে তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর সামনের একটি লনে ফিলিস্তিনপন্থিদের একটি ছোট শিবির স্থাপন করা হয়েছে। ইসরাইলকে প্রতিরক্ষা সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদারত্বের অবসান চান বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা।
নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও লিডস, ব্রিস্টল ও ওয়ারউইকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে তাঁবু টানিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা রোধে পুলিশের কঠোর অবস্থানকে সমর্থন করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
ফ্রান্স : গত শুক্রবার (৩ মে) দেশটির শীর্ষ রাজনৈতিক বিজ্ঞান স্কুল সায়েন্সেস পো-তে অবস্থান নেন ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ জোর করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন। এমনকি, বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হলেও প্যারিসের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, প্যারিসের ডাউফাইন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনের সমর্থনে করতে যাওয়া একটি সম্মেলন নিষিদ্ধ করেছে। এই সম্মেলনের নেতৃত্বে ছিলেন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ রিমা হাসান। তিনি গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার নিন্দায় প্রথম থেকেই সোচ্চার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এ সম্মেলন জনসাধারণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারত। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
জার্মানি : শুক্রবার (৩ মে) মধ্য বার্লিনের হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা অন্য জায়গায় ক্যাম্প করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তাদের জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়। বার্লিনের মেয়র কাই ওয়েগনার এই প্রতিবাদের সমালোচনা করেছেন। এক 'এক্স' বার্তায় তিনি বলেছেন, আমেরিকা বা ফ্রান্সের মতো ঘটনা দেখতে চায় না জার্মানি।
কানাডা : গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কানাডার মন্ট্রিয়েল, অটোয়া, টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভারসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের হুমকির মুখেও মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী দেশটিতে প্রথমবারের মতো ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করেন।
ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের আর্থিক ও অ্যাকাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন না করা পর্যন্ত ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অপসারণ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। তাদের দাবি, কিছু বিক্ষোভকারী ম্যাকগিলের কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য নয়।
অস্ট্রেলিয়া : গত শুক্রবার ইউনিভার্সিটি অব সিডনিতে মুখোমুখি অবস্থান নেন ফিলিস্তিন ও ইসরাইলপন্থিরা। সে সময় তারা পতাকা নেড়ে নিজেদের পক্ষে স্স্নোগান দিতে থাকেন। উভয়পক্ষের মধ্যে কিছু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই এ বিক্ষোভ চলছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিক্ষোভকারীরা সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সবুজ লনে তাঁবু টানিয়ে ১০ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। তারা চান, অস্ট্রেলিয়া সব ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি অস্ত্র কোম্পানিগুলোতে অর্থায়ন বন্ধ করুক। এছাড়া ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভে নেমেছেন জাপান, ভারত, লেবানন, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও মেক্সিকোর শিক্ষার্থীরাও।