গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন

ইসরাইলের সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্য স্থগিত

গাজায় বাধাহীন ও যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ প্রবাহ অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত এ পদক্ষেপ বহাল থাকবে

প্রকাশ | ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় 'ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়'কে কারণ হিসেবে উলেস্নখ করে ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে তুরস্ক। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইল গাজায় 'বাধাহীন ও যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ প্রবাহ' অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত এ পদক্ষেপ বহাল থাকবে। দেশ দুটির মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার। এদিকে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ানকে 'স্বৈরশাসক'র মতো আচরণের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎজ বলেছেন, এরদোয়ান তুরস্কের জনগণ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে অসম্মান করেছেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সমঝোতাকে উপেক্ষা করেছেন। কাৎজ জানান, তিনি মন্ত্রণালয়কে এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন, তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্যের বিকল্প সন্ধান করতে যাতে স্থানীয় উৎপাদন এবং অন্য দেশ থেকে আমদানিতে জোর দেওয়া হবে। অন্যদিকে, এক বিবৃতিতে তুরস্ক জানিয়েছে, এই বাণিজ্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই কার্যকর হবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'তুরস্ক কঠোরভাবে ও সন্দেহাতীতভাবেই নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে, যতদিন পর্যন্ত ইসরাইল সরকার গাজায় বাধাহীন ও পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবাহের অনুমোদন না দেয়। ১৯৪৯ সালে প্রথম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় তুরস্ক। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ২০১০ সালে গাজায় তুরস্ক মালিকানাধীন জাহাজ ইসরাইলের সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করার সময় ইসরাইলি কমান্ডোদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১০ জন ফিলিস্তিনপন্থি তুর্কি অধিকারকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় তুরস্ক কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিন্ন করেছিল। পরে ২০১৬ সালে আবার দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপন হয়। কিন্তু এর দুই বছরের মাথায় উভয় দেশ একে অন্যের শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে গাজা সীমান্তে ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর ইসরাইলের তীব্র সমালোচনা করে আসছেন। গত জানুয়ারিতে তিনি বলেন, হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে সামরিক অভিযান চালিয়েছেন, তা 'হিটলার যা করেছিল, তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।' জবাবে নেতানিয়াহু বলেছেন, 'এরদোয়ান, যিনি কুর্দিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটিত করেছেন এবং যিনি তার শাসনের বিরোধিতা করায় সাংবাদিক বন্দির ক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ড করেছেন, তিনিই হলেন শেষ ব্যক্তি, যিনি আমাদের নৈতিকতা শেখাচ্ছেন।' গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়ছে। জাতিসংঘ সমর্থিত এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত মাসে ১১ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধায় জর্জরিত ছিলেন এবং চলতি মাসের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস বলেছে, গাজা উপকূলে মার্কিন সামরিক বাহিনী যে পিয়ার (অস্থায়ী জেটি) নির্মাণ করেছে, ত্রাণ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সেটি কয়েকদিনের মধ্যেই উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ভাসমান ওই পিয়ারে নৌযান ও লোকজনের কাজের ছবিও প্রকাশ করেছে আমেরিকা। তার কাছেই মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজে অবস্থান করছিল। যদিও জাতিসংঘ বলেছে, সামুদ্রিক করিডর কখনো স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহের বিকল্প হতে পারে না। আর সড়কপথ হলো একমাত্র উপায়, যেখানে একসঙ্গে অনেক পরিমাণ ত্রাণ নেওয়া যায়। এর আগ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বারংবার অনুরোধের প্রেক্ষাপটে চলতি সপ্তাহে গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরাইল ইরেজ ক্রসিং আবার খুলে দিয়েছে। তবে জর্ডান বলেছে, তাদের কিছু ত্রাণবাহী লরি ওই ক্রসিং পার হওয়ার সময় ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার শিকার হয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, গাজার মানবিক বিপর্যয় একটি মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সিনিয়র কর্মকর্তা ভলকার তুর্ক বলেছেন, এটা এখন 'বিশ্বাসযোগ্য' যে ইসরাইল ক্ষুধাকে গাজা যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ইসরায়েল ত্রাণ সরবরাহ সীমিত করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটি গাজায় যাদের প্রয়োজন তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে। গাজায় প্রবেশ করেছে ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক এদিকে, গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২ মে) ইসরাইলি সরকারি কার্যক্রমের সমন্বয়কারী সংস্থা ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দেয়। এক 'এক্স' বার্তায় সংস্থাটি জানায়, উত্তর গাজায় বিমান থেকে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২২টি ট্রাক ত্রাণ উত্তর গাজায় সরবরাহ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এপ্রিলে প্রতিদিন গড়ে ১৬৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইল। তবে ইসরাইল যে সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম। কারণ অবরুদ্ধ এলাকায় প্রতিদিন এক হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক দরকার।