দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ। শনিবারও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। সব মিলিয়ে গত এক সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। দেশটির শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও অন্যান্য দাবিতে ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, গার্ডিয়ান, রয়টার্স
আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর টেজার ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। যদিও বেশিরভাগ বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল বলে উপস্থিত কর্মী ও মিডিয়া কর্মীরা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ইংলিশ অ্যান্ড ইনডিজেনাস' বিষয়ের অধ্যাপক এমিল কেমেকে পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, 'পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢোকার পরপরই সবাইকে জোর করে সরাতে থাকে। সশস্ত্র পুলিশ ও তাদের রাবার বুলেট এসব দেখে আমার মনে হচ্ছিল- আমি কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। আমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।' তিনি আরও বলেন, 'পুলিশ আমার পাশে এক শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যায়, এক বৃদ্ধাকে ধাক্কা দেয়, এরপর আমাকেও ধাক্কা দেয়।'
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছেন। উপত্যকাটিতে এরই মধ্যে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা চান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন ইসরাইলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন সবকিছুতে বিনিয়োগ বন্ধ করে, যা গাজা যুদ্ধে ইন্ধন জোগায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দুই নারী অধ্যাপককে আটক করতে দেখা যায়। এর মধ্যে এক অধ্যাপককে মাটিতে ঠেসে ধরে এক পুলিশ এবং আরেক পুলিশ তার হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশের কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ২০ জনই এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য ছিলেন।
ইনডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের বস্নুমিংটনের ইনডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ এক ই-মেইল বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ক্যাম্পাস থেকে ২৩ প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশের পাশাপাশি ইনডিয়ানা অঙ্গরাজ্য পুলিশ বিক্ষোভকারীদের জানিয়েছে, তারা ক্যাম্পাসের মধ্যে তাঁবু খাটিয়ে শিবির গড়তে পারবেন না। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে মনরো কাউন্টি জাস্টিস সেন্টার পাঠিয়েছে। গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বাধা দান ও অপরাধমূলক অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আমেরিকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ফিলিস্তিনপন্থি এই প্রতিবাদ প্রথমে শুরু হয় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, যা এখনো শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে আছে। গত সপ্তাহে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতাধিক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্য পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বোস্টনের নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদকারীদের স্থাপিত একটি শিবির সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে তারা, এই শিবির ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানো ১০২ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আর তাদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হবে। অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শনিবার ভোরে পুলিশ ক্যাম্পাস থেকে ৬৯ জন প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলা প্রতিবাদে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছেন। পাশাপাশি যেসব কোম্পানি ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জড়িত, তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছে তারা। ইসরাইলকে আমেরিকার সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধেরও দাবি জানাচ্ছে তারা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যেসব শিক্ষার্থী ও ফ্যাকাল্টি সদস্যদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার জন্য বহিষ্কার বা শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাদের সাধারণ ক্ষমার দাবি।
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় গত সাত মাস ধরে চলতে থাকা ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও। বার্লিনে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে শিবির স্থাপন করেছেন যুদ্ধবিরোধী কর্মীরা। প্যারিসের নামকরা 'সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটি'তে মূল ভবনের বাইরে বিক্ষোভের কারণে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ক্লাস নিতে বাধ্য হয়। সুইডেনেও শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ। বিক্ষোভে জনতা ফিলিস্তিন মুক্ত করো এবং ইসরাইলকে বয়কট কর সেস্নাগান দেয়। এছাড়া শনিবার বিকালে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতে শত শত লোক জড়ো হন।