পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রচার
মোদির বক্তৃতায় নেই 'মোদি' অলঙ্কার 'মোদির গ্যারান্টি'ও উধাও!
প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
তার ভোটের বক্তৃতায় 'মোদি' শব্দকে অলঙ্কার বানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশটির পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটের যত জনসভা তিনি করেছেন, তাতে বারবার তার ভাষণে 'মোদি নে কিয়া', 'মোদি কা সপ্?না' শোনা গেছে। কিন্তু শুক্রবার রাজ্যের মালদহ উত্তরের সমাবেশে তিনি 'মোদি' অলঙ্কার খুলে রেখেই বক্তৃতা করেছেন। তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ
মোদির মিনিট পঁচিশেকের বক্তৃতায় এক বারের জন্যও 'মোদি কি গ্যারান্টি' শব্দবন্ধ শোনা যায়নি। যদিও এই লোকসভা নির্বাচনে এটাই বিজেপির সেস্নাগান। একটা সময় পর্যন্ত 'এবার ৪০০ পার' সেস্নাগানকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলা হলেও বিজেপি দলের ইশতেহার প্রকাশ করার পর দেখা যায় সেটির নাম দেওয়া হয়েছে, 'মোদি কি গ্যারান্টি ২০২৪'। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই সেস্নাগান একটিবারও মোদির গলায় শোনা গেল না। তবে সেটা শুধুই মালদহে। এরপরে বিহারের পূর্ণিয়ায় জনসভা করেন মোদি। সেখানে তার মুখে 'মোদি' বা 'মোদির গ্যারান্টি' দুই সেস্নাগান শোনা গেছে। তবে কি পশ্চিমবঙ্গের জন্যই এই বদল?
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের ৮টি আসনের জন্য প্রচার শেষ হয় মোদির। মালদহ উত্তরের খগেন মুর্মু এবং মালদহ দক্ষিণের শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর হয়ে প্রচার করে ফিরে যান তিনি। এর আগে আরও ছয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে এসেছিলেন মোদি। তার বক্তৃতায় বারবার শোনা গিয়েছিল 'মোদি' শব্দ। শুক্রবার যা শোনা গেল, মাত্র একটি বার! প্রায় ২৪ মিনিটের বক্তৃতার একেবারে শেষে তিনি প্রতিবারের মতোই প্রধানমন্ত্রী সমাবেশের উদ্দেশে বললেন, 'সবাই নিজের নিজের এলাকায় ফিরে সবাইকে মোদির প্রণাম জানাবেন।'
বার তিনেক 'আমি'। কিন্তু 'মোদি' একবারও নয়। বরং শুক্রবার 'বিজেপি সরকার' বলেছেন মোদি। কিন্তু কেন? প্রথম দফার ভোটের পর কি প্রচারের 'কৌশল' বদল করলেন মোদি? রাজ্য বিজেপি অবশ্য সেটা মনে করছে না। দলের রাজ্যসভার সদস্য তথা মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রীর একটা বড় পরিচয় হলো তিনি সুবক্তা। আর সুবক্তারা একই কথা, একই ঢঙে বারবার বলেন না। পরিবর্তন করেন। সেটাই হয়েছে মালদহে।'
তবে এই রাজ্যের মোদির বক্তৃতায় এই আকস্মিক বদলের পেছনে অন্য জল্পনাও কাজ করছে। প্রথম দফা ভোটের পরই এই আলোচনা শুরু হয়েছে। তা হলো ভোটদানের হার। গোটা ভারতে ২১ রাজ্যের ১০২টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল গত ১৯ এপ্রিল। সেটিই প্রথম দফা। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী প্রথম দফায় গড় ভোট পড়ে ৬৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে প্রথম দফায় ভোট পড়েছিল ৬৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে ভোটের হার খুব কমেনি। তবে ভারতের গড় বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যের তিন আসনের গড় ৭৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভোটই ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিজেপির 'শক্তি' বেশি, এমন রাজ্যগুলোর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে ভোট পড়েছে ৫৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, রাজস্থানে ৫০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। গড় ভোট সব চেয়ে কম বিহারে। প্রথম দফায় রাজ্যের চারটি আসনে গড় ভোট পড়েছে ৪৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
ভারতের সর্বত্রই তীব্র গরম এবং তাপপ্রবাহ চলছে। সেই কারণেই কি ভোটদানের হার তুলনায় কম? এমন প্রশ্ন ছাড়াও দু'টি যুক্তি রয়েছে। অনেকে এমন মতামতও প্রকাশ করছেন যে, ২০১৪ বা ২০১৯ সালের মতো ভোট নিয়ে 'আগ্রহ' নেই ভোটারদের মধ্যে। কারণ তৃতীয় বার মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা এক রকম নিশ্চিত বলেই প্রচার চলছে। তবে তৃতীয় প্রশ্নটি বিজেপির জন্য উদ্বেগের। বিরোধীরা এমন প্রশ্নও তুলছেন যে, এবার 'মোদি হাওয়া' কম। তাই ভোটদানে উৎসাহও কম। সেটা সত্যি হলে মালদহে মোদির বক্তৃতায় তারই ছাপ পড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। সে জন্যই মোদির মুখে 'মোদি'-র পরিবর্তে 'বিজেপি সরকার'। আর 'আমি' নেই। এবার 'সরকার'। বিহারের বক্তৃতাতেও মোদি বেশি করে ভোট দেওয়ার, সকাল সকাল ভোট দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
ভোটদানের হার বাড়ানোর জন্য এবার অতীতের তুলনায় অনেক বেশি প্রচার করছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সাধারণ প্রচার মাধ্যম তো বটেই, সেই সঙ্গে 'বন্দে ভারত এক্সপ্রেস' থেকে শুরু করে কলকাতা মেট্রোর কামরায় অনবরত গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে উৎসাহ বৃদ্ধির প্রচার চলছে। তারপরেও মোদি মালদহের জনসভায় বক্তৃতার শুরুতে নির্বাচনকে 'গণতন্ত্রের উৎসব' বলে ব্যাখ্যা করে দ্বিতীয় দফায় যেখানে যেখানে ভোট, সেখানকার ভোটারদের আলাদা করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে দাবি করেন, প্রথম দফার ভোট বিজেপির পক্ষেই গেছে। তিনি বলেন, 'বিরোধীরা প্রথম দফার ভোটেই ভয় পেয়ে গেছে। দ্বিতীয় দফায় বিধ্বস্ত হয়ে যাবে।' মালদহে দুর্নীতি থেকে তোষণের রাজনীতির অভিযোগে কংগ্রেস-তৃণমূলকে এক সূত্রে গেঁথে আক্রমণ করেছেন মোদি। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে সন্দেশখালি সবই ছিল তার বক্তব্যে। শুধু ছিল না 'মোদির গ্যারান্টি'।