গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন
বিক্ষোভে উত্তাল মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ইহুদি বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার বিক্ষোভকারীদের
প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আমেরিকার বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এখন আমেরিকার কলম্বিয়া এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান এই বিক্ষোভ সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মকর্তারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি
বিক্ষোভ থামাতে সোমবার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক ডজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে, ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যায়ল ক্যাম্পাসে সশরীরে ক্লাস নেওয়া আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেসহ অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে, বিক্ষোভ বন্ধ করে ক্যাম্পাসকে শান্ত রাখার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের ওপর দিন দিন চাপ বাড়ছে বলে জানা গেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এরপর থেকেই যুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ এবং তর্ক-বিতর্কের চর্চা বাড়তে থাকে আমেরিকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, সাম্প্রতিক সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষ এবং ইসলামভীতি দুইই বেড়েছে।
বিক্ষোভ সামাল দিতে গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশকে ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি দেয় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে গিয়ে বিক্ষোভকারী অনেক শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, যা সারা বিশ্বেই বেশ আলোচিত হয়। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের ঘটনার পর আমেরিকার আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ' শিক্ষার্থী গত কয়েকদিন ধরেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্যাম্পাসকে শান্ত রাখার জন্য বিক্ষোভকারীদের 'একাধিকবার অনুরোধ' করা হলেও তারা সেটা উপেক্ষা করেছে। সে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা পুলিশে খবর দিয়েছেন। অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীদের অনেকেই সামরিক অস্ত্র তৈরি খাতে বিনিয়োগ কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি এবং এমারসন কলেজেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। কলাম্বিয়ার প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমতো তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছে। অন্যান্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরাও ইসরাইলি অস্ত্র সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অবশ্য, এসব বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিও পোস্টে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের প্রতি সমর্থন জানাতেও দেখা গেছে। যদিও ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা বলছেন, তাদের প্রতিবাদ ও সমালোচনা কেবল ইসরাইল রাষ্ট্রের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে।
এদিকে, সোমবার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আপাতত তাদের সব ক্লাস অনলাইনে চলবে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট মিনোচে শফিক এক বিবৃতিতে বলেন, 'ভীতিকর ও হয়রানিমূলক আচরণ' এড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকেন না, তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন ইহুদি ধর্মযাজকও কলম্বিয়ার ৩০০ ইহুদি শিক্ষার্থীর কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন, যেখানে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে না আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ড. শফিক বলেন, ক্যাম্পাসকে অশান্ত করার জন্যই কলাম্বিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়- এমন একদল ব্যক্তি বিক্ষোভ ছড়িয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন। এই সংকট সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ড. শফিক গত সপ্তাহে মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে গিয়েছিলেন। সেখানে মার্কিন সরকারের একটি কমিটির সামনে তারা সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদি-বিদ্বেষ মোকাবিলার পাশাপাশি উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের জন্য তাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্কের রিপাবলিকান প্রতিনিধি এলিস স্টেফানিকের নেতৃত্বে ফেডারেল আইনপ্রণেতাদের একটি দল সোমবার একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে, যেখানে ড. শফিককে পদত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে স্টেফানিক বলেন, ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়ানোর বিক্ষোভ আন্দোলন থামাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর ডেমোক্রেট প্রতিনিধি জ্যারেড মস্কোভিটস, জোশ গোটেইমার, ড্যান গোল্ডম্যান এবং ক্যাথি ম্যানিং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।
জোশ গোটেইমার বলেন, চলমান বিক্ষোভের ফলে কলাম্বিয়ায় যদি ইহুদি শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বোধ না করেন, তবে সেটার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মূল্য দিতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক চিঠিতে উত্তর ক্যারোলিনার রিপাবলিকান প্রতিনিধি ভার্জিনিয়া ফক্স লিখেছেন, শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। ভার্জিনিয়া ফক্স বর্তমানে হাউস অ্যাডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।