গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের এক ভয়ংকর দৃশ্য রোববার প্রকাশ্যে এসেছে। এই হাসপাতালের আঙিনায় একটি গণকবর থেকে ২০০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে নাসের হাসপাতালে দুই দফায় হামলা চালিয়েছিল ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। তারা হাসপাতালের সরঞ্জাম এবং সুযোগ-সুবিধাগুলো ধ্বংস করেছিল এবং পুরো এলাকাটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি
প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, কীভাবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হাসপাতালের ভেতর থেকে লোকদের ধরে নিয়েছিল, তাদের পিঠের পেছনে হাত বেঁধে তাদের চোখ বেঁধেছিল এবং কোয়াডকপ্টার বা স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করে তাদের হত্যা করেছিল। তাদের সবাইকে একটি গণকবরে দাফন করা হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে (৭ এপ্রিল) ইসরাইলি বাহিনী এই শহরটি ছেড়ে যায়। এতদিন ইসরাইলি বাহিনীর দখলে থাকায় ওই এলাকায় অনুসন্ধান চালানো সম্ভব হয়নি। এরপরই সেখানে এই গণকবর শনাক্ত হলো।
ফিলিস্তিনি জরুরি পরিষেবা বলেছে, 'আমাদের দলগুলো আগামী দিনে অবশিষ্ট শহীদদের খোঁজে তাদের অনুসন্ধান এবং পুনরুদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখবে। কারণ তাদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক এখনো (গণকবর) রয়েছে।' কয়েক মাসের নিরলস ইসরাইলি বোমাবর্ষণ এবং ভারী লড়াইয়ের পর গাজার এই শহরের বেশিরভাগ অংশই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
রাফাহতে বিমান হামলায় নিহত
১০, বেশিরভাগই শিশু
এদিকে, শনিবার রাতে গাজা ভূখন্ডের রাফাহর একটি বাড়িতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ছয়জনই শিশু। গত শুক্রবার রাফাহ শহরের একটি বাড়িতে বিমান হামলায় তারা নিহত হন। ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে প্রায় সাত মাস ধরে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলি হামলা ও প্রাণহানির পর আল-নাজ্জার হাসপাতালে নিহতদের স্বজনরা সাদা কাফনে জড়িয়ে থাকা শিশুদের লাশ জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শোকার্ত এক দাদি বলেন, 'আমার প্রিয় হামজা। তোমার চুল খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।' নিহতদের মধ্যে আবদেল-ফাত্তাহ সোভি রাদওয়ান, তার স্ত্রী নাজলা আহমেদ আওয়েদাহ এবং তাদের তিন সন্তান রয়েছে বলে তার শ্যালক আহমেদ বারহুম জানিয়েছেন। বারহুম তার স্ত্রী রাওয়ান রাদওয়ান এবং তাদের পাঁচ বছর বয়সি মেয়ে আলাকে হারিয়েছেন। বারহুম বলেছেন, 'এটি সব মানবিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা বর্জিত বিশ্ব। তারা বাস্তুচু্যত মানুষ, নারী ও শিশুদের ভরা বাড়িতে বোমাবর্ষণ করেছে। এসব হামলায় একমাত্র শহীদ নারী ও শিশু।'
পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর
হামলায় ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। একই সময় ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের পৃথক হামলায় এক ফিলিস্তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালকও নিহত হন। শুক্রবার ভোররাত থেকে পশ্চিম তীরের তুলকার্ম শহরের নিকটবর্তী নুর শামস এলাকায় ইসরাইলি বাহিনী বিস্তৃত এক অভিযান শুরু করে। সেখানে সশস্ত্র ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের শুরু হওয়া লড়াই শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় সংঘটিত যুদ্ধে ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া ফিলিস্তিনিরা নুর শামস এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের বংশধররাও এখন এলাকাটিতে বসবাস করছে। সেখানে ইসরাইলের সামরিক যানগুলো জড়ো হওয়ার পরপরই ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় নুর শামস এলাকায় অন্তত তিনটি ড্রোন উড়তে দেখা যায়।
বিভিন্ন ফিলিস্তিনি উপদলীয় বাহিনী নিয়ে গঠিত 'তুলকার্ম ব্রিগেডস' জানিয়েছে, শনিবার তাদের যোদ্ধারা ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময় করেছে।
গাজা যুদ্ধের ডামাডোলে অঞ্চলটিতে ধারাবাহিকভাবে চলা সহিংসতার খবর তেমন একটা সামনে আসছে না। অথচ সেখানে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোতে তান্ডব চালাচ্ছে আর ফিলিস্তিনিরাও রাস্তায় ইসরাইলিদের ওপর সুযোগমতো পাল্টা হামলা চালাচ্ছে।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে পশ্চিম তীরে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি গ্রেপ্তার ও কয়েকশ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের পাশাপাশি পাথর ছোড়া তরুণরা ও নিরীহ বেসামরিকরাও রয়েছেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পৃথক আরেক ঘটনায় নাবলুস শহরের দক্ষিণে আল-সাবিয়া গ্রামের কাছে ইসরাইলিদের গুলিতে ৫০ বছর বয়সি এক অ্যাম্বুলেন্স চালক নিহত হন। ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ওই গ্রামটিতে হামলা চালালে অনেকে আহত হন। এই অ্যাম্বুলেন্স চালক আহতদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় ইসরাইলিরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।