হামলা-পাল্টা হামলা ঘিরে তৈরি হওয়া চরম উত্তেজনার মধ্যে আবারও ইসরাইলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইরান। শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'এনবিসি নিউজ'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির হোসেইন আমিরআবদুলস্নাহিয়ান বলেছেন, ইসরাইল তেহরানের স্বার্থবিরোধী কাজ করলে ইরান তাৎক্ষণিকভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জবাব দেবে। একই সঙ্গে শুক্রবার ইরানের ইসফাহান শহরে হওয়া হামলার ঘটনায় তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আমির হোসেইন আমিরআবদুলস্নাহিয়ান বলেছেন, শুক্রবারের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ইসরাইলের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এনবিসি, এএফপি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ড্রোনগুলো ইরানের ভেতর থেকে ছোড়া হয়েছে এবং কয়েকশ মিটার উড়ে যাওয়ার পর সেগুলো ভূপাতিত হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'এগুলো ড্রোন নয়; তবে খেলনার মতো। যা দিয়ে আমাদের বাচ্চারা খেলাধুলা করে। আর এসবের সঙ্গে ইসরাইলের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ এখনো আমরা পাইনি। ইরান বিষয়টি তদন্ত করছে। তেহরানের তথ্য অনুযায়ী, গণমাধ্যমে আসা তথ্য সঠিক নয়।
ইরানের সরকারি কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম বলছে, শুক্রবার ভোরের দিকে ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইসফাহান শহরে তিনটি ড্রোন ধ্বংস হয়। এর ফলে সেখানে ছোট বিস্ফোরণ ঘটে। তারা এ ঘটনাকে ইসরাইলের পরিবর্তে ??'অনুপ্রবেশকারীদের' আক্রমণ হিসেবে উলেস্নখ করেছেন। এর মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে গেছেন।
ইসরাইল যদি প্রতিশোধ নেয় এবং ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাহলে তেহরানের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কঠোর হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন আমিরআবদুলস্নাহিয়ান। তিনি বলেন, 'যদি ইসরাইল আরেকবার দুঃসাহসিকতা দেখায় এবং ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করতে চায়, তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক এবং সর্বোচ্চ স্তরের হবে।'
শুক্রবার গভীর রাতে ইরানের মধ্যাঞ্চলের ইসপাহান শহরের কাছের একটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা হয়। তবে কৌশলগত কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়েছে এসব ড্রোন। এ ছাড়া এই হামলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি।
ইসরাইল এই হামলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন বলেছেন, আমেরিকা কোনো আক্রমণাত্মক অভিযান চালায়নি। যদিও হোয়াইট হাউস বলেছে, এ বিষয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই।
আকাশ প্রতিরক্ষার প্রমাণ দিল ইরান
নতুন এক ক্যারিশমা দেখালো ইরান। তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে কতটা উন্নত, এর প্রমাণ রাখলো শুক্রবার ভোরে। এদিন ইসরাইলের ছোড়া ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আমেরিকার কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, হামলাটি চালিয়েছে ইসরাইল। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। যদিও ইরানের পক্ষ থেকে শুধু ড্রোনের কথা বলা হয়েছে। তাও বলা হয়েছে, এসব ড্রোন ছুড়েছে ইরানের ভেতর অনুপ্রবেশকারীরা। ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আবদুল রহিম মৌসাভি বলেছেন, ইসপাহানে যেসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, তা ড্রোন ধ্বংস করার শব্দ ছিল। তিনি জানিয়েছেন, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে এসব ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে ইসরাইল থেকে যে এসব ড্রোন ছোড়া হয়েছে, সেটা স্বীকার করেনি ইরান।
এ ছাড়া ইসরাইলের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি নিশ্চিত করা হয়নি। গত ১৩ এপ্রিল রাতে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। ওই হামলার পর থেকেই ইরানে পাল্টা হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল ইসরাইল। এর মধ্যেই শুক্রবার সকালে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইসপাহানে যেসব ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলো ইসরাইল থেকে ছোড়া হয়েছে- এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ইরান। দেশটির এক কর্মকর্তা বলেছেন, 'এ ঘটনার বহিঃসূত্র এখনো নিশ্চিত হয়নি। আমরা বাইরের কোনো হামলার শিকার হইনি। এখন মূলত হামলার বদলে অনুপ্রবেশ নিয়ে আলোচনা চলছে।'
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনসু্যলেট ভবনে হামলা চালায় ইসরাইল। ওই হামলায় ইরানের বিপস্নবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন।
দামেস্কে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইলে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এরপর গত শুক্রবার ইরানে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানায় আমেরিকা। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তেল আবিব ও তেহরানের মধ্যে এই উত্তেজনা চলছে।