নিহত ১৮
ইউক্রেনে দফায় দফায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইউক্রেন হারলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী ডেনিস
প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ইউক্রেনের ঐতিহাসিক শহর চেরনিহিভে বুধবার দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ওই শহরে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ১৮ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এরই মধ্যে মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে আরও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি
বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের রাস্তাঘাট রক্তাক্ত হয়ে আছে। উদ্ধারকর্মীরা জীবিতদের উদ্ধারে কাজ করছেন। এছাড়া আহতদের উদ্ধার করে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
চেরনিহিভের বাসিন্দা ওলগা সামোইলেঙ্কো বলেন, প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি যখন বিস্ফোরিত হলো তখন তিনি তার সন্তানদের নিয়ে তাদের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের করিডোরে অবস্থান করছিলেন। ৩৩ বছর বয়সি ওলগা বলেন, 'আমাদের প্রতিবেশীরাও এরই মধ্যেই সেখানে অবস্থান করছিলেন। আমরা চিৎকার করে সবাইকে মেঝেতে শুয়ে পড়তে বলেছিলাম। সবাই তাই করেছিল এবং এর মধ্যেই আরও দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। তারপরই আমরা পার্কিং লটে ছুটে যাই।'
এদিকে জরুরি সেবা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তিন শিশুসহ ৬০ জন রুশ হামলায় আহত হয়েছে। শহরের মেয়র ওলেকসান্দর লোমাকো জানিয়েছেন, ডজনখানেকের বেশি ভবন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডজনখানেক যানবাহন এবং মেডিকেল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। কিয়েভের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, হামলায় পাঁচটি আবাসিক ভবন, একটি হাসপাতাল, কয়েক ডজন গাড়ি এবং একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুশ হামলা প্রতিহত করতে পশ্চিমা দেশগুলোর উচিত ইউক্রেনকে আরও সহায়তা দেওয়া। তিনি বলেন, ইউক্রেন যদি পর্যাপ্ত বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পেত এবং রাশিয়ার সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করার জন্য বিশ্বের দৃঢ় সংকল্প থাকত, তবে তারা এভাবে হামলা চালাতে পারত না। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত চেরনিহিভ শহরটি। যুদ্ধের আগে ওই শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় দুই লাখ ৮৫ হাজার।
ইউক্রেন হারলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু
হয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী ডেনিস
রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে ইউক্রেন হেরে গেলে 'তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ' শুরু হয়ে যাবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল। রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে মার্কিন কংগ্রেসে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা একটি বিদেশি সহায়তা বিল পাসের আহ্বান জানিয়ে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী বিলটি পাসের বিষয়ে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, মার্কিন আইনপ্রণেতারা কিয়েভের জন্য ৬১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজটির অনুমোদন দেবেন। আগামী শনিবার মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে এই বিলের ওপর ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইসরাইলের পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক সহায়তার বিষয়টিও ওই বিলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী শ্যামিহাল মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার বিষয়ে বলেন, 'এই অর্থ আমাদের গতকালই দরকার ছিল, আজ কিংবা আগামীকাল নয়।' তিনি বলেন, 'আমরা যদি এটা না পাই... তাহলে ইউক্রেনের পতন ঘটবে। আর তখন বিশ্ব, বিশ্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে...। আর এটা ঘটলে পুরো বিশ্বকে নিরাপত্তার একটি নতুন ব্যবস্থা খুঁজে বের করতে হবে। অথবা বিশ্বজুড়ে অনেক সংঘাত দেখা দেবে। এই ধরনের অনেক যুদ্ধ বাধবে। দিনের শেষে এটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে গড়াবে।'
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে সম্ভাব্য পরাজয় নিয়ে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এবারই প্রথম যে এভাবে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, বিষয়টি তেমন নয়। কারণ এর আগে গত বছর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, সংঘাতে রাশিয়া যদি জিতে যায়, তাহলে তারা পরে পোল্যান্ডে আক্রমণ করবে; যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করবে।
তবে পশ্চিমাদের এই ধরনের যুদ্ধভীতির দাবিকে নিয়ে উপহাস করেছেন ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা। গত মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন রাশিয়া পূর্ব ইউরোপে একদিন হামলা চালাতে পারে পশ্চিমাদের এমন আশঙ্কাকে 'পুরোপুরি বাজে কথা' বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ভেতরে কোনো দেশে রাশিয়া কখনোই হামলা চালায়নি। ন্যাটোর সামষ্টিক প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুযায়ী কোনো সদস্য দেশের ওপর হামলা হলে তা জোটের সব সদস্যের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয়।