সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনসু্যলেটে হামলার জবাব দিয়েছে তেহরান। ইসরাইলসহ তার মিত্ররা বলছে, ইরানি হামলায় বিশেষ কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ইসরাইলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বড় হামলার পর ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা 'ইরানিয়ান স্টুডেন্টস নিউজ এজেন্সি' (আইএসএনএ) একটি কলাম প্রকাশ করেছে। এতে তারা জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরাইলের নাভাতিম বিমানঘাঁটি এবং হেরমন পাহাড়ের ওপর একটি সামরিক অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইসরাইল এই ক্ষয়ক্ষতি লুকানোর চেষ্টা করছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, আইএসএনএ
বার্তা সংস্থাটি বলেছে, নাভাতিম বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে, কারণ গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনসু্যলেটে যে ভয়াবহ হামলা হয়েছিল, সেটি এই ঘাঁটি থেকে চালানো হয়েছিল। অপরদিকে, হেরমন পাহাড়ের ওপর থাকা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একটি গোয়েন্দা অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। কারণ, এই স্থান থেকে সিরিয়ায় ইরানের বিভিন্ন অবস্থানের ওপর চালানো অসংখ্য হামলা পরিচালিত হয়েছে।
আইএসএনএ বলেছে, ইরান ইসরাইলের কোনো বেসামরিক ব্যক্তি ও অবকাঠামোর ওপর হামলার কোনো পরিকল্পনাই করেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ইসরাইলিরা তাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর রাতটি পার করেছে। হামলার ক্ষয়ক্ষতি লুকানোর বিষয়টি উলেস্নখ করে বার্তা সংস্থাটি বলেছে, 'ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। কিন্তু ইসরাইল এসব ক্ষয়ক্ষতি লুকানোর চেষ্টা করছে।'
ইরানের এমন অভূতপূর্ব হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ওই সময় ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর প্রস্তাব দেন নেতানিয়াহু। কিন্তু বাইডেন এতে সমর্থন দেননি। তিনি নেতানিয়াহুকে জানান, ইসরাইল যদি পাল্টা হামলা চালায় তাহলে এতে যুক্ত হবে না আমেরিকা।
হামলায় সামরিক ঘাঁটিসহ বিলিয়ন
ডলার ক্ষতি ইসরাইলের
এদিকে, ইসরাইলকে লক্ষ্য করে গত শনিবার রাতে 'অপারেশন ট্রু প্রোমিজ' নামে যে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান, এতে বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে ইসরাইলের। ইরান হামলায় তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইসরাইলের দাবি, তারা বেশিরভাগ হামলাই প্রতিহত করেছে। এরপরও ইসরাইলে ইরানের হামলায় ক্ষতিও হয়েছে অনেক। তবে তারা সেটি সঠিকভাবে প্রকাশ করছে না।
এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানাতে নতুন একটি বিবৃতি দিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। তবে ইসরাইল যা বলছে, এর সঙ্গে বাস্তবতার মিল দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, ইসরাইল ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। কিন্তু তাদের বিবৃতিতে তা প্রকাশ পায়নি।
ইরানের হামলায় কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলেছে, ইরানের বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করেছে তারা। তবে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে একটি ঘাঁটিতে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আঘাত হেনেছে। এতে সামান্য অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।
আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, ইরানের হামলায় একজন আহত হওয়ার খবর জেনেছেন তারা। তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলে আঘাত হানার পর একটি সামরিক ঘাঁটিতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কোন্ ঘাঁটিতে কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে, তা জানানো হয়নি।
এদিকে, রাতভর ইরানের ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করতে ইসরাইলের ১০০ কোটি (এক বিলিয়ন) ডলারের বেশি খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সাবেক এক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রিম আমিনোচ ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম 'ওয়াইনেট নিউজ'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা জানান। আমিনোচ বলেন, 'আমরা যদি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা বলি; ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র- যা অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ভূপাতিত করা দরকার, সেগুলো আমরা মূলত যুদ্ধবিমান দিয়ে ভূপাতিত করছি। অ্যারো ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ৩৫ লাখ ডলার, ডেভিডস স্স্নিংয়ের জন্য ১০ লাখ ডলার, এ ছাড়া জেট বিমানের জন্যও এ ধরনের খরচ হয়েছে। অর্থাৎ, সব খরচ মেলালে এক বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে।
এই হামলার পর থেকে পাল্টা হামলার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে ইরানের ইসলামি বিপস্নবী গার্ড বাহিনী, একই সঙ্গে ইসরাইলের প্রতিও সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে তেহরান।