গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন

ফিরছেন খান ইউনিসের বাসিন্দারা

উপত্যকার দক্ষিণাংশ থেকে হঠাৎ সেনা কমিয়েছে ইসরাইল হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত যুদ্ধবিরতির নতুন আলোচনাও ব্যর্থ

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
খান ইউনিসে ফিরছেন ওই শহরে যারা ছিলেন, তাদের একাংশ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাংশ থেকে হঠাৎ সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। এরপরই খান ইউনিসে ফিরতে শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। কেউ হেঁটে, কেউ বাইসাইকেলে পস্নাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে ফিরছেন। কিন্তু গিয়ে চেনা শহরটিকে চিনতে পারছেন না তারা। কারণ ইসরাইলি বাহিনী ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে শহরটিকে। শহর থেকে সরে গেলেও ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জোর দিয়ে বলেছে, গাজায় একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বাহিনী থাকবে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেন, সেনাদের ভবিষ্যতের অভিযানের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণাকে কৌশলগত হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। যুদ্ধ শেষের দিকে চলে যাচ্ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। খান ইউনিসে মাত্র একটি ব্রিগেড রেখে বাকি সব সেনা ফিরিয়ে নিয়েছে তেল আবিব। কিন্তু হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে ছয় মাস ধরে ফিলিস্তিনি উপত্যকায় তান্ডব চালানো ইসরাইল হঠাৎ এভাবে পিছু হটল কেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। চলতি বছরের শুরু থেকেই গাজায় সেনা সংখ্যা কমিয়ে আনছিল ইসরাইল। অবরুদ্ধ উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় রোধে ইসরাইলের ওপর আমেরিকাসহ মিত্র দেশগুলোর চাপ ক্রমেই বাড়ছিল। হামাসকে নির্মূলে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে বেশ কিছুদিন ধরেই স্থল অভিযান চালানোর হুমকি দিয়ে আসছে ইসরাইল। কিন্তু সাম্প্রতিক সেনা প্রত্যাহারের ঘটনায় ওই অভিযান পিছিয়ে যাবে কি-না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। গত কয়েক মাস ধরেই খান ইউনিসে বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। খান ইউনিস শহর এবং এর আশপাশের একটি বড় অংশই ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে রাফাহতে অবস্থান করছেন এমন এক ব্যক্তি বলেন, 'আমার এক প্রতিবেশী খান ইউনিসে তার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। ফলে আমরাও ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।' যারা এরই মধ্যে খান ইউনিসে ফিরেছেন, তাদের অনেকেই নিজের শহরকে চিনতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্কুল ও হাসপাতাল। সড়কগুলোতে বুলডোজার চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। গত ডিসেম্বরে খান ইউনিস থেকে পালানো মাহমুদ আবদেল গনি বলেন, 'অনেক এলাকা, বিশেষ করে শহরের প্রাণকেন্দ্র বসবাসের উপযুক্ত নয়। আমার ও আমার প্রতিবেশীর বাড়ি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে।' বাস্তুচু্যত হওয়া নাজওয়া আয়াশ নামের আরেকজন বলেন, তার পরিবারের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের তৃতীয় তলায় তিনি যেতে পারছেন না। কারণ সিঁড়ি নেই। ধ্বংসস্তূপ বেয়ে ওপরে উঠে তার ভাই সন্তানদের জন্য কিছু জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন। বাসেল আবু নাসের আরেক বাসিন্দা বলেছেন, শহরটি ধ্বংসনগরী হয়ে গেছে। জীবনের কোনো স্পন্দন নেই। তারা কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি। গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় ৩৮ জন নিহত এদিকে, গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর গোলাবর্ষণে ৩৮ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় তারা এসব হামলা চালায়। ফিলিস্তিনি সংস্থা 'ওয়াফা' এ কথা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এ ভূখন্ডের স্বাস্থ্য সূত্রের বরাত দিয়ে সংস্থাটি জানায়, 'গত ২৪ ঘণ্টায় দখলদার বাহিনী চারটি স্থানে গণহত্যা চালায়। এতে ৩৮ জন নিহত এবং ৭১ জন আহত হয়েছেন।' তাদের মতে, গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলের নুসিরাত শরণার্থী শিবির এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ছয় বেসামরিক লোক নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। উপত্যকার দক্ষিণের আল-নাসর শহরে বেসামরিক নাগরিকের একটি দলকে লক্ষ্য করে চালানো ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় কমপক্ষে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। গাজা শহরের পার্শ্ববর্তী শুজাইয়ায় একটি বাড়ি লক্ষ্য করে দখলদার বাহিনী বোমা হামলা চালায়। পরে ওই বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির নতুন আলোচনাও ব্যর্থ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিসরে শুরু হওয়া নতুন আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইসরাইল ও হামাস তাদের নিজ সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। এর ফলে আলোচনায় কোনো সাফল্য আসেনি। হামাসের হাতে পণবন্দি ইসরাইলিদের অবিলম্বে ফেরানোর ব্যবস্থা করুক সরকার, এই দাবিতে ইসরাইলে স্থানীয়দের বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। জনক্ষোভ দানা বাঁধছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। এছাড়া গাজায় নির্বিচারে হামলায় সাধারণ মানুষকে হত্যা করার কারণে বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে পড়েছে ইসরাইল। কাছের বন্ধুরাও এখন ইসরাইলের কর্মকান্ডের সমালোচনা করছে। কায়রোয় নতুন করে শুরু হওয়া আলোচনায় ইসরাইল বলেছে, 'আমরা যুদ্ধজয়ের থেকে আর মাত্র কয়েক পা দূরে।