কনসু্যলেটে হামলার প্রতিশোধ
ইসরাইলে হামলা হবে সরাসরি : ইরান
আমেরিকার উচিত আঘাত না পেতে একপাশে সরে দাঁড়ানো : তেহরান ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত লেবাননের হিজবুলস্নাহও
প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনসু্যলেটে হামলার জবাবে ইসরাইলে আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া তেহরান আমেরিকাকে 'সরে থাকতে' বলেছে। ভয়াবহ ওই হামলার জবাব দিতে এবার সরাসরি ইসরাইলে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রধান 'ছায়া বাহিনী' (প্রক্সি) হিজবুলস্নাহও ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেছে, তারাও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। ইরানের প্রেসিডেন্টের রাজনীতি বিষয়ক ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ জামশিদি সামাজিক মাধ্যম 'এক্স'-এ লিখেছেন, ওয়াশিংটনের কাছে পাঠানো এক লিখিত বার্তায় ইরান 'আমেরিকাকে (বেনিয়ামিন) নেতানিয়াহুর ফাঁদে পা না দিতে সতর্ক করেছে।' তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা
ইরান বলেছে, আমেরিকার উচিত আঘাত না পেতে এক পাশে সরে দাঁড়ানো। জামশিদি বলেছেন, এর জবাবে আমেরিকা ইরানকে মার্কিন লক্ষ্যগুলোতে আঘাত না হানার জন্য বলেছে। ইরানের পাঠানো কথিত এই বার্তা সম্পর্কে আমেরিকা কোনো মন্তব্য করেনি।
এক প্রতিবেদনে 'সিএনএন' এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরান 'উলেস্নখযোগ্য' জবাব দিতে পারে, আর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন লক্ষ্যস্থলগুলোও হামলার শিকার হতে পারে সম্ভাবনায় আমেরিকা উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে এবং এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী সপ্তাহে ইরান হামলা চালাতে পারে বলে 'সিএনএন'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'আমরা অবশ্যই উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছি।'
'এনবিসি' চ্যানেল দুই অনামা মার্কিন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, 'প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন যেটি গুরুত্ব দিচ্ছে, তা হলো- কোনো হামলা হলে তা ইসরাইলের ভেতরে নির্দিষ্টভাবে সামরিক অথবা গোয়েন্দা লক্ষ্যস্থলগুলোতে হতে হবে, বেসামরিক নয়।'
দামেস্কে ইসরাইলের হামলার পর বাইডেন প্রশাসন বিরল এক পদক্ষেপ নিয়ে ইরানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তেহরানকে জানায়, আমেরিকা দামেস্কের কূটনৈতিক কম্পাউন্ডে ইসরাইলি হামলার সঙ্গে 'জড়িত ছিল না' এবং এ হামলার বিষয়ে আগাম কোনো খবরও তাদের কাছে ছিল না। এ থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের বাহিনী ও ঘাঁটিগুলোকে সম্ভাব্য হামলা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান বলেছে, চিরশত্রম্ন ইসরাইলকে 'চপেটাঘাত' করবে তারা। তবে কখন এটি ঘটবে, তা এখনো পরিষ্কার হয়নি। ইরান নিজেই সরাসরি ইসরাইলে আক্রমণ করবে, না লেবাননের হিজবুলস্নাহর মতো তাদের কোনো ছায়া বাহিনী দিয়ে হামলা চালাবে তাও পরিষ্কার হয়নি।
গত সোমবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের স্থানীয় সময় বিকাল প্রায় ৫টার দিকে ইসরাইলের বিমান হামলায় ইরানের কনসু্যলেট ভবন ধ্বংস হয়। ওই হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি ও তার ডেপুটি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজরিয়াহিমিসহ বাহিনীটির আরও পাঁচ কর্মকর্তা নিহত হন বলে এক বিবৃতিতে আইআরজিসি জানিয়েছে। এই হামলার ঘটনায় আঞ্চলিক প্রতিপক্ষদের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই হামলাকে তেহরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়ায় ইরানি স্বার্থের ওপর চালানো সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য হামলাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ইসরাইল অনেকদিন ধরেই নিয়মিতভাবে সিরিয়ায় ইরানের সামরিক স্থাপনা ও তাদের ছায়া বাহিনীগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে, কিন্তু এই প্রথম ইরানি কূটনৈতিক কম্পাউন্ডে হামলা চালায় তারা।
দামেস্কে ইরানি সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যার পর তেহরানের সম্ভাব্য পাল্টা হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে ইসরাইল। এই পরিস্থিতিতে ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী তাদের যুদ্ধ ইউনিটগুলোর সব ধরনের ছুটি বাতিল করেছে। আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলোতে সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি করে সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে।
ইসরাইলের প্রধান বাণিজ্যিক নগরী তেল আবিবে থাকা 'রয়টার্সের' সাংবাদিকরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে জিপিএস পরিষেবা বিঘ্ন ঘটছে; শত্রম্নর সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোনকে বিভ্রান্ত করতে সম্ভবত এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে হিজবুলস্নাহর নেতা হাসান নাসরালস্নাহ বলেছেন, ইরান থেকে একটি জবাব আসছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তার বাহিনী এ ধরনের সিদ্ধান্তে জড়াবে না। আর তারপর, ইসরাইল কী আচরণ করবে (তার ভিত্তিতে) এই অঞ্চল একটি নতুন পর্বে প্রবেশ করবে। আত্মগোপনে থাকা নাসরালস্নাহ মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তথাকথিত প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করার বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য হিজবুলস্নাহ পুরোপুরি প্রস্তুত।'
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে ইসরাইলি বাহিনীগুলোর সঙ্গে প্রায় দৈনিকভিত্তিতে গোলাগুলি বিনিময় করছে হিজবুলস্নাহর যোদ্ধারা। তবে এসব সংঘর্ষে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী এ মিলিশিয়া বাহিনীটি তাদের 'মূল অস্ত্র' ব্যবহার করছে না বলে জানিয়েছে।