ইউরোপ ও আমেরিকার একে অপরকে প্রয়োজন এবং 'একজোট থাকলে অধিক শক্তিশালী হয়ে ওঠে' বলে মনে করেন ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ। আমেরিকা নেতৃত্বাধীন সামরিক এক জোটের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ কথা বলেন তিনি। স্টলটেনবার্গ বলেন, 'আমি একা আমেরিকায় বিশ্বাস করি না, একইভাবে একা ইউরোপে বিশ্বাস রাখি না।' তথ্যসূত্র : বিবিসি
জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, আমেরিকা ইউরোপকে নিরাপত্তা দিলেও ওয়াশিংটনেরও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সামরিক, গোয়েন্দা এবং কূটনৈতিক সুবিধার প্রয়োজন রয়েছে। তার ভাষায়, 'আমি ন্যাটোতে আমেরিকা এবং ইউরোপ একসঙ্গে বিশ্বাস করি, কারণ আমরা একসঙ্গে শক্তিশালী ও নিরাপদ।'
ন্যাটো প্রধানের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন সামরিক এই জোটটি ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সহায়তা প্রদানের জন্য পাঁচ বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল বিবেচনা করছে, যাতে আমেরিকা বা ন্যাটোর সদস্য অন্য কোনো দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে কিয়েভকে সাহায্য করা ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা করতে আমেরিকার ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ কংগ্রেসে কয়েক মাস ধরে আটকে আছে। রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা তা আটকে দিয়েছেন।
বক্তৃতার সময় স্টলটেনবার্গ বলেন, ন্যাটো অবশ্যই 'সঠিক কিছু করছে', নিজেদের সূচনাকালে এই জোটটিতে ১২টি দেশ থাকলেও বর্তমানে তা ৩২টিতে উন্নীত হয়েছে। ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের কারণে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড তাদের দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষতা পরিত্যাগ করেছে এবং ন্যাটো জোটে নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে সম্পর্ক 'সরাসরি সংঘর্ষের পর্যায়ে চলে গেছে'। কারণ সামরিক এই জোটটি এরই মধ্যে ইউক্রেনের চারপাশে সংঘাতে 'জড়িত' রয়েছে।
যদিও ন্যাটো একটি প্রতিরক্ষামূলক জোট, তারপরও পেসকভ অভিযোগ করেছেন, 'সংঘাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য আমেরিকা এই জোট গঠনের ধারণা সামনে এনেছিল। পরে জোটটি সজ্জিত করা, তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করে আসছে আমেরিকা' এবং বর্তমানে এটি একটি 'অস্থিতিশীল উপাদান'।
এদিকে, ৩২ সদস্যের এই জোট ইউক্রেনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সহায়তার পরিকল্পনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশ শুধুমাত্র তত্ত্বগতভাবে এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা হাঙ্গেরি সতর্ক করেছে, তারা 'ন্যাটোর এমন কোনো প্রস্তাবকে সমর্থন করবে না, যা জোটটিকে যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে বা এটিকে প্রতিরক্ষামূলক থেকে আক্রমণাত্মক জোটে রূপান্তরিত করতে পারে'।
এছাড়া হাঙ্গেরিয়ান সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে অর্থায়নের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েছে এবং কিছু সময়ের জন্য ইউক্রেনের জন্য ৫০ বিলিয়ন ইউরোর সহায়তা প্যাকেজ প্রদানে ইইউয়ের পরিকল্পনাও অবরুদ্ধ করেছে।
স্টলটেনবার্গ স্বীকার করেছেন, (ইউক্রেনকে) সমর্থনের কাঠামোর বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই নীতিতে একমত হয়েছেন, 'তারা কোনো ভুল করবেন না, ইউক্রেন এখন এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য ন্যাটো সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে পারে।'