বাইডেনের হুমকি

গাজায় ত্রাণ প্রবেশের পথ খুলছে ইসরাইল

ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কথা বলার পর সুর নরম করেছেন নেতানিয়াহু ত্রাণকর্মী নিহত : ইসরাইল দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করল ইসরাইলকে যুদ্ধাপরাধে দায়ী করার আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইলি বাহিনীর কয়েকটি দল গাজায় গেছে হামাস নিধনের নামে গণহত্যা চালাচ্ছে, আর কিছু সেনা গাজা-ইসরাইল সীমান্তে ট্যাংক নিয়ে অবস্থান করছে। যাতে হামাস যোদ্ধারা আবারও ইসরাইলের ভেতর ঢুকে হামলা চালাতে না পারে। ছবিটি বৃহস্পতিবার তোলা -রয়টার্স অনলাইন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হুমকির পর গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য নতুন রুট খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই সময় বাইডেন নেতানিয়াহুকে জানান, গাজার বেসামরিকদের রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এবং ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা না হলে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে আমেরিকা। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা বাইডেনের ফোনের কয়েক ঘণ্টা পর ইসরাইল সুর নরম করে জানায়, উত্তর গাজার ইরেজ গেট যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো অস্থায়ীভাবে পুনরায় খোলা হবে এবং অ্যাশদোদ বন্দরটিও মানবিক ত্রাণ প্রবেশের জন্য খুলে দেওয়া হবে। জর্ডান থেকে আরও সাহায্য কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার গাজায় বেসামরিকদের ও ত্রাণ কর্মীদের সুরক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইসরাইলকে কড়া বার্তা দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এমন পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ইসরাইলের বিষয়ে মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন আনা হবে বলে হুমকি দেন তিনি। এদিন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে এক টেলিফোন কলে এ সতর্কতা জানান বাইডেন। গাজায় আমেরিকাভিত্তিক বেসরকারি ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডবিস্নউসিকে) ত্রাণ কর্মীদের ওপর ইসরাইলের প্রাণঘাতী হামলার পর বেসামরিকদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমেরিকার অপেক্ষাকৃত কঠোর অবস্থানের জানান দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওই হামলার ঘটনার পর বাইডেনের ডেমোক্রেট দলীয় সহকর্মীরা ইসরাইলকে দেওয়া আমেরিকার সহায়তায় শর্ত আরোপ করার জন্য নতুন করে আহ্বান জানান। ইসরাইলের আজীবন সমর্থক বাইডেন দেশটিতে দেওয়া আমেরিকার সহায়তা আটকে রাখা অথবা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখার চাপ প্রতিরোধ করে আসছিলেন। এবার তিনি প্রথমবারের মতো ইসরাইলকে দেওয়া সহায়তায় সম্ভাব্য শর্ত আরোপ করার হুমকি দিলেন। দুই নেতার কথোপকথনের বিষয়ে এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, 'বেসামরিকদের ক্ষতি, মানবিক দুর্ভোগ চিহ্নিত এবং ত্রাণ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ইসরাইলকে সুনির্দিষ্ট, বাস্তব ও যাচাইযোগ্য পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে বলে বাইডেন পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।' বাইডেন ও নেতানিয়াহু প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে কথা বলেন। এ সময় বাইডেন পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন 'এসব বিষয়ে ইসরাইলের আশু পদক্ষেপ ?নিয়ে পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে আমেরিকার গাজা নীতি নির্ধারিত হবে'। দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করল ইসরাইল এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দেইর আল-বালাহ এলাকায় গত সোমবার রাতে ইসরাইলি বিমান হামলায় এনজিও ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডবিস্নউসিকে)-এর সাত কর্মী নিহতের ঘটনায় মারাত্মক ভুল এবং সামরিক বিধি লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে দুই ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে ইসরাইল। এদের একজন হচ্ছেন কর্নেল পদমর্যাদার ব্রিগেড চিফ অব স্টাফ এবং মেজর পদমর্যাদার একজন ব্রিগেড ফায়ার সাপোর্ট কর্মকর্তা। এছাড়া, সাউদার্ন কমান্ডের প্রধান এক জেনারেল এবং আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এ ঘটনার জন্য তিরস্কারও করেছে ইসরাইল। হামলার ঘটনার তদন্তে দেখা গেছে, ইসরাইলি বাহিনী ত্রাণ গাড়িবহরকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের গাড়ি ভেবে ভুলবশত হামলা চালিয়েছে। ওই হামলার ঘটনায় ডবিস্নউসিকে'র ত্রাণবহরের তিনটি গাড়িতে ড্রোন আঘাত হানে। এটি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আদর্শ যুদ্ধ পরিচালনা পদ্ধতির লঙ্ঘন। শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলেছে, 'ত্রাণের গাড়িবহরে হামলা বড় ধরনের ভুল। মানুষ চিনতে ভুল করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল এবং মানসম্মত যুদ্ধ পরিচালনা পদ্ধতির বিপরীতে যাওয়া- এসব ক্ষেত্রে মারাত্মক ব্যর্থতার কারণেই এমনটি ঘটেছে।' ডবিস্নউসিকের নিহত সাত কর্মীর মধ্যে পোল্যান্ডের একজন, যুক্তরাজ্যের তিনজনসহ অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার এক দ্বৈত নাগরিকও ছিলেন। তাদের মৃতু্য নিয়ে চলতি সপ্তাহে বিশ্বে তোলপাড় হয়েছে। পোল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিক নিহতের ঘটনায় ইসরাইলের কাছ থেকে ব্যাখ্যাও দাবি করেছে। ডবিস্নউসিকে বলছে, দেইর আল-বালাহর একটি গুদাম থেকে চলে যাওয়ার সময় ত্রাণবাহী গাড়িবহরে হামলায় কর্মীরা নিহত হন। তারা সমুদ্রপথে গাজায় নেওয়া ১০০ টনের বেশি খাবার ওই গুদামে রেখে আসতে গিয়েছিলেন। ত্রাণবাহী গাড়িবহরে ছিল তিনটি গাড়ি। এর মধ্যে দুটি ছিল অস্ত্রসজ্জিত। তিনটি গাড়িতেই হামলা হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি ট্রাকের ওপর অস্ত্রহাতে এক ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল। এরপর আরও তিনটি গাড়ি গুদাম ছেড়ে যাওয়ার সময় ইসরাইলি সেনা কমান্ডাররা সেগুলোকে ডবিস্নউসিকে'র বলে শনাক্ত করতে পারেনি। ইসরাইলকে যুদ্ধাপরাধে দায়ী করার আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস গাজায় সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। শুক্রবার ২৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ভোট দানে বিরত ছিল ১৩ দেশ এবং বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ছয় দেশ। প্রস্তাবে 'দায়মুক্তির অবসানের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।' এতে 'অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের প্রতিবেদনে গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এই প্রস্তাব জয়যুক্ত হলেও তা মানতে কোনো দেশ বাধ্য নয়। তবে এ ধরনের প্রস্তাব ইসরাইলের ওপর কূটনৈতিক চাপ জোরদার করবে বলে ধারণা করা যায়।