সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনসু্যলেট ভবনে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হামলায় ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড বাহিনীর বিদেশি অভিযান পরিচালনা শাখা কুদস ফোর্সের ঊর্ধ্বতন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ আটজন নিহত হয়েছেন। সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
ইসরাইলের অধিকৃত গোলান মালভূমি থেকে কনসু্যলেট ভবনকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরাইলের ছোড়া কিছু ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে। কিন্তু অন্য আরও ক্ষেপণাস্ত্র কনসু্যলেটে আঘাত হেনে গোটা ভবনই ধসিয়ে দিয়েছে এবং ভেতরে থাকা প্রত্যেকেই হতাহত হয়েছেন। তবে হামলার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ইসরাইল। যদিও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে শতাধিক হামলার কথা স্বীকার করছে ইসরাইলি বাহিনী। যেগুলো ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড অস্ত্র, অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল বলে তাদের দাবি।
হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই খবরটি সম্পর্কে অবগত। সিরিয়ায় ইরানি কনসু্যলেটে হামলার ঘটনায় ইরানকে আমেরিকা বলেছে, সিরিয়ায় ইরানি কনসু্যলেটে ইসরাইলি হামলায় তাদের 'কোনো সম্পৃক্ততা নেই'। সোমবার সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি দক্ষিণ ইসরাইলি শহর ইলাতে একটি নৌ-ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার কথা উলেস্নখ করেন। তিনি জানান, ড্রোনটি ইরানের তৈরি এবং তাদের দ্বারাই পরিচালিত।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলি হামলায় ইরানের কনসু্যলেট ভবনটি পুরোপুরি ধসে গেছে এবং ভবনের ভেতর যারা ছিলেন তাদের সবাই আহত অথবা নিহত হয়েছেন। তবে হামলায় সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত হোসেন আকবারি এবং তার পরিবারের কোনো সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত হননি। কনসু্যলেটের যে ভবনটিতে হামলা হয়েছে তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরানি বার্তা সংস্থা 'নূর নিউজ'।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক 'সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস' বলছে, হামলায় নিহত হয়েছেন আটজন। এরা হলেন, কুদস ফোর্সের ঊর্ধ্বতন একজন কমান্ডার, দুই ইরানি উপদেষ্টা এবং রেভলিউশনারি গার্ডের পাঁচ সদস্য।
গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি হামলা জোরদার হয়েছে। একই সময়ে হিজবুলস্নাহ এবং লেবানন ও সিরিয়ার অন্য গোষ্ঠীগুলোও ইসরাইলের আন্তঃসীমানায় হামলা চালায়। তবে সোমবারের হামলাটি প্রথমবারের মতো ইরানের কনসু্যলেট ভবনে চালানো হয়েছে। ইসরাইলি এই হামলাটি ইরান ও তাদের মিত্রদের ওপর এক ধরনের চাপ বাড়ানোর জন্যই হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনাটিকে ইরান ও হিজবুলস্নাহ কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করছে ইসরাইল। একইসঙ্গে দেশটি দেখছে, ইরান ও হিজবুলস্নাহ তাদের অবস্থান থেকে সরে যায় কি না। এই হামলার ঘটনার পাল্টা জবাব হতেও পারে, আবার নাও পারে। আবার ক্ষেপণাস্ত্রের জবাবে সামরিক হামলার বদলে সাইবার হামলার ঘটনাও ঘটতে পারে।
ইসরাইলি হামলার কঠোর প্রতিশোধ
নেওয়া হবে : হুমকি ইরানের
এদিকে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনসু্যলেটে ইসরাইলি বিমান হামলার কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে তেহরান। হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর সাত কমান্ডারের প্রাণহানির ঘটনার একদিন পর এই হুমকি দিয়েছে ইরান। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, দামেস্কে কনসু্যলেটে সন্দেহজনক ইসরাইলি বিমান হামলার প্রতিশোধ নেবে ইরান।
তিনি বলেছেন, 'প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইল নিজেকে রক্ষার জন্য তার অ্যাজেন্ডায় অন্ধ হত্যাকান্ড ফিরিয়ে এনেছে। এটা অবশ্যই জানতে হবে যে, তাদের এই লক্ষ্য কখনই অর্জিত হবে না এবং এই কাপুরুষোচিত অপরাধের জবাব দেওয়া হবে।'
ইরানের বিপস্নবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, সোমবারের হামলায় ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ডস কোরের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি ও তার ডেপুটি জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমি নিহত হয়েছেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুলস্নাহিয়ান এই হামলাকে 'সব ধরনের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও চুক্তির লঙ্ঘন' বলে অভিহিত করেছেন। কনসু্যলেট ভবনে হামলার ঘটনায় ইসরাইল জড়িত বলে দাবি করেছেন তিনি। পৃথক এক বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, ইরানের প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার রয়েছে। আর এই প্রতিক্রিয়ার ধরন ও হামলার শাস্তি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তেহরান।
এদিকে, সিরিয়ায় কনসু্যলেট ভবনে ইসরাইলি হামলার ঘটনার পরপরই তেহরানের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।