গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন
ধ্বংসস্তূপে পরিণত আল-শিফা হাসপাতাল
ভবনের ধ্বংসাবশেষ আর আবর্জনার মাঝে ফিলিস্তিনিদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মরদেহ রেখে ইসরাইলি সেনারা হাসপাতালটি ছাড়ে
প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
দুই সপ্তাহের ধ্বংসাত্মক ও প্রাণঘাতী অভিযানের পর অবশেষে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতাল থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসরাইল। কিন্তু চলে যাওয়ার আগে গাজার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটিকে তারা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। ভবনের ধ্বংসাবশেষ আর আবর্জনার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মরদেহ রেখে ইসরাইলি সেনারা হাতপাতালটি ছাড়ে। সোমবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে সেনা প্রত্যাহারের তথ্য জানানো হয়েছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, আল-অ্যারাবিয়া
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তারা 'অনেক সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে' এবং 'অসংখ্য অস্ত্র এবং গোয়েন্দা নথিপত্র' পেয়েছে। তারা বলেছে, 'গোয়েন্দা তথ্যে আমরা জানতে পেরেছিলাম আল-শিফা হাসপাতালকে হামাস তাদের একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সেখান থেকে হামলা পরিচালনা করছে। যে কারণে আমরা সেখানে অভিযান চালিয়েছি।' তবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস আল-শিফা প্রাঙ্গণকে তাদের একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবিস্নউএইচও) বলেছে, গত দুই সপ্তাহে আল-শিফা হাসপাতালে অন্তত ২১ জন রোগী মারা গেছেন। গাজার আল-শিফা হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসাস। রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইলি অভিযানে অন্তত ২১ রোগী মারা গেছেন। 'এক্সে' দেওয়া পোস্টে আল-শিফা হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন ডাবিস্নউএইচও প্রধান। তিনি বলেছেন, হাসপাতালের বিধ্বস্ত ভবনের মধ্যে এখনো ১০৭ জন রোগী আছেন, যাদের অবস্থা খুবই করুণ। তাদের জন্য নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে শুরু করে কোনো রকম পথ্য বা অন্যান্য সামগ্রীরও অভাব রয়েছে।
গাজা যুদ্ধের শুরুর দিকেও একবার আল-শিফা হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছিল আইডিএফ। সে সময় তারা বলেছিল, তাদের হাতে খবর রয়েছে যে, ইসরাইল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া জিম্মিদের হাসপাতালটির ভেতরে আটকে রাখা হয়েছে।
গাজার বেসামরিক জরুরি সেবা বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনী দুইজনকে এমনভাবে হত্যা করেছে; যাদের মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে হাতকড়া পরা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ইসরাইলের সেনারা হাসপাতাল চত্বরে কবর দেওয়া মৃতদেহগুলো বুলডোজার ব্যবহার করে উত্তোলন করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আল-শিফা হাসপাতাল এলাকার কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ও চত্বরে অনেক ফিলিস্তিনির মরদেহ পড়ে আছে। কিছু মরদেহ নোংরা কম্বলে ঢেকে রাখা হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভবনের বাইরে মাটি খুঁড়ে গভীর গর্ত করা হয়েছে। কোনো ভবনই অক্ষত নেই। হয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নয়তো মাটিতে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে।
আল-শিফা হাসপাতাল দেখতে যাওয়া সামির বাসেল নামে এক ব্যক্তি বলেন, 'আমি এখানে পৌঁছানোর পর আমার কান্না থামাতে পারিনি। দখলদার বাহিনী এখানে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে। এলাকাটি ধ্বংস করা হয়েছে। ভবনগুলো পুড়িয়ে ফেলেছে অথবা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এই স্থানটি পুনরায় নির্মাণ করা দরকার। এখানে শিফা হাসপাতালের কোনো অস্তিত্ব নেই।
হামাস প্রধানের বোনকে গ্রেপ্তারের দাবি
অভিযান চালিয়ে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার বোনকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলি বাহিনী। সোমবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাত দিয়ে 'টাইমস অব ইসরেল' জানিয়েছে, ইসমাইল হানিয়ার এক বোনকে হামাসের অপারেটিভদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সন্ত্রাসী কাজে সমর্থন করার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইসরাইলি পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা শিন বেতের সঙ্গে যৌথ অভিযানে ৫৭ বছর বয়সি একজন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি হামাসের একজন সিনিয়র সদস্যের আত্মীয়। যাকে 'আর্লি ডন' বলা হয়েছিল। বিবৃতিতে সন্দেহভাজন নারীকে শনাক্ত করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে যে, তিনি দক্ষিণাঞ্চলীয় তেল শেভা শহরের বাসিন্দা, সেখানে অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছে যে, নারীটি ইসমাইল হানিয়ার বোনদের একজন।
সাত মাসে ৬০০ সেনা খুইয়েছে ইসরাইল
গত ৭ অক্টোবর গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত মাসে ৬০০ সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য হারিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সোমবার আইডিএফের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে এ তথ্য। গাজায় সর্বশেষ নিহত ইসরাইলি সেনার নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করেছে আইডিএফ। সোমবারের বিবৃতি এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, 'সেনা সদস্য নাদাভ কোহেনের (২০) মৃতু্যর মধ্য দিয়ে গাজায় নিহত ইসরাইলি সেনার সংখ্যা ৬০০ জনে পৌঁছেছে।'