ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর শনিবার আবারও নির্বিচার হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ১৭ জন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন। এর আগে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের সংখ্যা ১২ বলে জানানো হয়েছিল। ইসরাইল এর আগেও কয়েক দফায় গাজায় সাহায্যপ্রার্থীদের ওপর এ ধরনের হামলা চালিয়েছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি
সাহায্যপ্রার্থীরা গাজার আল-কুয়েত গোলচত্বরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই মোড়ে জড়ো হচ্ছেন এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তারা একের পর এক ইসরাইলি হামলার শিকার হচ্ছেন। এর আগে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট বলেছিল, গত শুক্রবার একই গোলচত্বরে সাহায্য বিতরণের সময় বন্দুক হামলায় পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। সে সময় হাজার হাজার মানুষ সেখানে ময়দা এবং অন্যান্য সরবরাহ বহনকারী ট্রাকগুলো আসার অপেক্ষায় জড়ো হয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ত্রাণ বিতরণের তত্ত্বাবধানকারী গাজাবাসী ফাঁকা গুলি চালায়, তবে ওই এলাকায় ইসরাইলি সেনারাও গুলি চালায় এবং কিছু চলন্ত ট্রাক খাবার নেওয়ার চেষ্টা করা লোকদের আঘাত করে। এতেই হতাহতের ওই ঘটনা ঘটে।
এদিকে, হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা মেডিকেল টিম এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের সহায়তায় হতাহতদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার সংগ্রামের 'বেদনাদায়ক দৃশ্য' বর্ণনা করেছেন। এমনকি হামলার পর কিছু আহত লোক মাটিতেও পড়ে ছিলেন।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এর আগে খাদ্য ও সহায়তা সরঞ্জাম সরবরাহকারী ট্রাকের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর একাধিকবার বড় পরিসরে হামলা চালিয়েছে এবং এতে বহু সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা' অবশ্য আরও বেশ কয়েকটি আক্রমণের তথ্য সামনে এনেছে। সংস্থাটি বলছে, সালাহ আল-দিন স্ট্রিটের ওয়াদি গাজা সেতুর কাছে ইসরাইলি হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া মাগাজি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা এবং মধ্য গাজার আল-বুরেজি শরণার্থী শিবিরে কামানের গোলাবর্ষণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতি আলোচনা
পুনরায় শুরু হচ্ছে : মিসর
কায়রোতে রোববার থেকে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরায় শুরু হচ্ছে বলে নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে মিসরের একটি টেলিভিশন স্টেশন। শনিবার 'আল-কোয়াহেরা নিউজ' টিভিতে এ খবর প্রচার করা হয়।
গাজা যুদ্ধের ছয় মাস হতে চলেছে। এ সময় ইসরাইলের অভিযানে গাজাজুড়ে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। ছোট্ট এই ভূখন্ডটির প্রায় ২৩ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হতে যুদ্ধরত সব পক্ষের ওপর চাপ বাড়ছে। হামাস ও ইসরাইল উভয়ই যুদ্ধবিরতি চায়, তবে নিজ নিজ শর্তে। নিজেদের অবস্থান থেকে কেউই পিছিয়ে আসতে রাজি না হওয়ায় এমনকি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইসরাইলের এক কর্মকর্তা রোববার কায়রোতে তাদের একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে, হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগে তারা কায়রোর মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ইসরাইলের প্রতিনিধি দলের আলোচনার ফল কী আসে, তা দেখায় অপেক্ষায় রয়েছেন।
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় ছয় সপ্তাহ ইসরাইলের অভিযান স্থগিত রাখার বিনিময় হামাসের হাতে এখনো জিম্মি ১৩০ ইসরাইলির মধ্যে ৪০ জনকে মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।