গাজায় অভিযান আরও জোরদার করেছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে এবং এর আশপাশে অভিযান চালানো হচ্ছে। সেখানে গত কয়েকদিনে আরও কয়েকজন হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং খান ইউনিসের বিভিন্ন স্থানেও হামলা অব্যাহত রয়েছে। তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
এদিকে, রাফাহ শহরে ইসরাইলি হামলা আরও সম্প্রসারিত হবে এমন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সেখানকার মানুষ। তারা আশঙ্কা করছে, গাজা সিটি বা খান ইউনিসের মতো একই পরিণতি ভোগ করতে হবে রাফাহর মানুষকে। সেখানে অধিকাংশ অবকাঠামোই ধ্বংস করেছে ইসরাইল।
ইসরাইলি অভিযান শুরুর পর লাখ লাখ ফিলিস্তিনি দক্ষিণ গাজার রাফাহতে আশ্রয় নেয়। এটি মিসর সীমান্তবর্তী এলাকা। এরই মধ্যে উত্তর ও মধ্য গাজাকে ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এখন আন্তর্জাতিক সব চাপ উপেক্ষা করে রাফাহতেও অভিযান চালাবে ইসরাইল।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি সেনাদের পরিবারের সদস্যদের বলেছেন, একমাত্র সামরিক চাপের মাধ্যমেই তাদের মুক্ত করা সম্ভব। তাছাড়া রাফাহতে সেনাবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। রাফাহতে স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা এরই মধ্যে উত্তর গাজা ও খান ইউনিস জয় করেছি।'
গাজা উপত্যকায় বাফার জোন
তৈরি করছে ইসরাইল
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজা উপত্যকা সংলগ্ন সীমান্তে একটি নিরাপত্তা বাফার জোন তৈরি করছে। যা এই ছিটমহলের প্রায় ১৬ শতাংশ এলাকা অধিগ্রহণ করে তৈরি করা হতে পারে। 'হারেৎজ' পত্রিকায় পরিবেশিত খবরে এই কথা বলা হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত চিত্র অনুযায়ী, জোনটি প্রায় এক কিলোমিটার প্রশস্ত হবে এবং সেই এলাকার সমস্ত ভবন ভেঙে ফেলা হবে। ওই নিউজ আউটলেট পরিবেবেশিত খবরে আরও বলা হয়, ইসরাইল ছিটমহলটিকে দুটি অংশে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করছে। এর একটি হবে উত্তর অংশ এবং অপরটি দক্ষিণ অংশ।
এই লক্ষ্যে ইসরাইলিরা বেসামরিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য 'নেটজারিম করিডর' নামে পরিচিত আরেকটি বিশেষ বাফার জোন তৈরি করছে। ওই এলাকায় সীমান্ত বরাবর বাফার জোন তৈরি হলে গাজা উপত্যকার প্রশস্ত হবে মাত্র ৫.৫ কিলোমিটার।
গাজা যুদ্ধ আরও সম্প্রসারণের হুমকি ইসরাইলের
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে অভিযান প্রসারিত করবে তাদের সামরিক বাহিনী। শুক্রবার 'এক্সে' দেওয়া এক পোস্টে তিনি আরও জানান, বৈরুত, দামেস্ক বা যত দূর থেকেই তারা অভিযান চালাবে, সেখানেই তাদের ওপর হামলা চালাব আমরা।' তবে গ্যালান্তের নতুন এই হুমকি হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে ইসরাইলের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে নয়।
গত সপ্তাহে আমেরিকা সফরে গিয়ে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহের গতি বাড়াতে এক চুক্তির পরপরই এমন মন্তব্য করেন গ্যালান্ত। কয়েক মাস আগে দক্ষিণ বৈরুতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হয়েছে।
পশ্চিম তীরের ২৭ বর্গকিলোমিটার
অঞ্চল দখলে নিল ইসরাইল
এদিকে, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের ২৭ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল দখল করেছে ইসরাইল। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধের সুযোগে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ভূখন্ড দখল করা শুরু করে তারা। এতে গত ছয় মাসের মধ্যেই ২৭ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল ছিনিয়ে নিয়েছে তারা।
ফিলিস্তিনি সরকারি সংস্থা 'কলোনাইজেশন অ্যান্ড ওয়াল রেসিস্ট্যান্ট কমিশন' (সিডাবিস্নউআরসি) শনিবার ৪৮তম ভূমি দিবসে এ তথ্য জানায়। সিডাবিস্নউআরসি আরও জানিয়েছে, অবৈধ দখলদার ইসরাইলি সরকার এক হাজার ৮৯৫টি নতুন বসতির অনুমোদন দিয়েছে। এতে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে বসবাস করা ২৫টি বেদুইন সম্প্রদায় বাস্তুচু্যত হয়ে গেছেন। এ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য ৮৪০টি চেক পয়েন্ট ও গেট স্থাপন করা হয়েছে।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী সাধারণ ফিলিস্তিনি ও তাদের সম্পদের ওপর ৯ হাজার ৭০০ বার হামলা চালিয়েছে এবং কয়েক হাজার জলপাই গাছ ধ্বংস করেছে অথবা সেগুলো উপড়ে ফেলেছে।
উলেস্নখ্য, ছয় দিনের যুদ্ধ শেষে ১৯৬৭ সালের ৭ জুন পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরাইল। ওই সময় এই অঞ্চলগুলো জর্ডানের শাসনাধীন ছিল। আন্তর্জাতিক আইনে দখলদারিত্ব অবৈধ হলেও ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এসব অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে ইসরাইল। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম তীরে অসংখ্য ইহুদি বসতি স্থাপন করেছে ইসরাইল। যেটি এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাদের এসব বসতি স্থাপনের কারণে নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন অনেক ফিলিস্তিনি।