বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই প্রথম উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক সূত্র স্থাপনের জন্য একাধিক স্পষ্ট ও খোলামেলা প্রস্তাবসহ দেশটির সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠকের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। উত্তর কোরিয়া বিষয়ক আমেরিকার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জুং পাক এ কথা বলেছেন। জুং পাক বলেন, 'আমরা আলাপ-আলোচনা চাই এবং বহু মূল্যবান আলোচনা রয়েছে, যা ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া বা ডিপিআরকের সঙ্গে হতে পারে।' তথ্যসূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা, পার্স টুডে
ওয়াশিংটনে 'সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ' (সিএসআইএস) আয়োজিত ১৮ মার্চের এক অনুষ্ঠানে জুং পাক বলেন, আলোচ্য বিষয়ের তালিকায় থাকতে পারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়, মানবিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলার নানা পদক্ষেপ। তিনি আরও যোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় ভুল বোঝাবুঝি ও অনিচ্ছাকৃত উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াতে ঝুঁকি কমানোর পদক্ষেপ নিক উত্তর কোরিয়া।
'কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস' আয়োজিত আরেক অনুষ্ঠানে ৫ মার্চ পাক বলেন, পিয়ংইয়ং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্তর্র্বর্তী পদক্ষেপ নিক, তা দেখতে চায় আমেরিকা।
জর্জ ডাবিস্নউ বুশ প্রশাসনের আমলে ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ছয় দলীয় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আলোচনায় বিশেষ দূত ছিলেন জোসেফ ডিট্রানি। তিনি গত ২২ মার্চ ই-মেইলে বলেন, বাইডেন প্রশাসন তাদের মেয়াদের শুরুর দিকের তুলনায় বিপরীত অবস্থানে গিয়ে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। কারণ কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই বর্ধিত অস্থিরতা থামাতে ও উত্তেজনা প্রশমিত করতে যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
চলতি বছরের শুরু থেকে পিয়ংইয়ং বারবার সিউলকে তাদের প্রাথমিক শত্রম্ন বলে অভিহিত করেছে এবং একত্রীকরণের বা অখন্ডতার নিন্দা করেছে। যদি যুদ্ধ বাধে তাহলে দক্ষিণ কোরিয়াকে দখল করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
চলতি বছর উত্তর কোরিয়া একাধিক রকেট ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে এবং কামান থেকে গোলাবর্ষণ করে কয়েকটি মহড়াও চালিয়েছে। তাদের সর্বশেষ পরীক্ষায় উত্তর কোরিয়া ১৮ মার্চ নতুনভাবে সজ্জিত সুবিশাল রকেট লঞ্চার নিয়ে একটি মহড়া দিয়েছে। যুদ্ধ শুরু হলে এই লঞ্চার বিপর্যয়কর পরিণতি ঘটাতে পারে বলে জানিয়েছে সে দেশের সরকার-চালিত সংবাদ সংস্থা 'কেসিএনএ'।
বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালে মেয়াদের শুরু থেকে বলেছে, পূর্বশর্ত ছাড়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে আলোচনা করতে তারা প্রস্তুত। পিয়ংইয়ংকে কী প্রস্তাব দেওয়া হবে বা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কোন প্রক্রিয়ায় এগোবে তা নিয়ে তারা নীরব থেকেছে। তবে, লক্ষ্য পূরণের দিকে ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
উত্তর কোরিয়ার নিষেধাজ্ঞা নবায়নে ভেটো রাশিয়ার
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া নবায়নের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব তোলার পর তাতে মস্কো ভেটো দেয়। মস্কোর এই পদক্ষেপের ফলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি প্যানেলের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। তবে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচির জন্য ২০০৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। একটি স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ প্যানেল গত ১৫ বছর ধরে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো পর্যবেক্ষণ করে আসছে এবং তারা বছরে দুইবার নিরাপত্তা পরিষদে পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট পেশ করে। বৃহস্পতিবার পর্যবেক্ষণ প্যানেলের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব তোলা হলে ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩ সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় এবং রাশিয়া এর বিরোধিতা করে। নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য চীন ভোটদানে বিরত ছিল। ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়ার আগে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, 'পশ্চিমা সরকারগুলো পিয়ংইয়ংকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছে এবং নিষেধাজ্ঞাগুলো তাদের প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে; এগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্ক নেই।'