আন্তর্জাতিক আদালত
দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ইসরাইলকে আদেশ
গাজার ফিলিস্তিনিরা আর দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতেই কেবল নেই বরং এরই মধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে
প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
অনতিবিলম্বে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের কাছে মৌলিক খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ইসরাইলকে আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। বৃহস্পতিবার আইসিজের বিচারকদের সর্বসম্মতিক্রমে এই আদেশ দেওয়া হয়। আইসিজে বলেছে, গাজার ফিলিস্তিনিরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। সেখানে দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা ছড়িয়ে পড়ছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, 'আদালতের পর্যবেক্ষণ হলো- গাজার ফিলিস্তিনিরা আর দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতেই কেবল নেই বরং এরই মধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে।' এর আগে ইসরাইল রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে অভিযোগ করে আইসিজেতে মামলা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই মামলার অধীন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণে আদালতে আবেদন জানিয়েছিল দেশটি। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি, বিবিসি
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালত বলেছে, ইসরাইলকে অবশ্যই 'অবিলম্বে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক পরিষেবা ও মানবিক সহায়তার বিধান' অনুমোদন করতে হবে। গাজায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে, পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করার পর আইসিজের এমন আদেশ এলো। তারা গাজায় ত্রাণ প্রবেশ আটকে দিচ্ছে, এমন অভিযোগগুলোকে 'পুরোপুরি ভিত্তিহীন' বলে দাবি করেছে ইসরাইল।
গাজায় গণহত্যামূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানুয়ারিতে ইসরাইলকে আদেশ দিয়েছিল দ্য হেগের এই আন্তর্জাতিক আদালত। আদালতের কাছে এই আদেশকে আরও জোরদার করার আর্জি জানিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তারপরই সর্বশেষ এই আদেশ জারি করেছে আইসিজে। আইসিজের আদেশ মানায় আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করার কোনো ক্ষমতা এই আদালতের নেই।
বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি ও অন্যদের মাধ্যমে পরিচালিত 'ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন গেস্নাবাল ইনিশিয়েটিভ' গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, গাজায় একটি 'বিপর্যয়কর' পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার সবাই 'উচ্চ মাত্রার তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন'। আর মে মাস শেষ হওয়ার আগেই ভূখন্ডটির উত্তরাংশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যাবে বলে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
আদেশে আইসিজে বলেছে, গাজা 'এখন আর শুধু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির সম্মুখীন না' বরং 'দুর্ভিক্ষ জেঁকে বসছে' আর জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য অনুযায়ী অপুষ্টি ও পানি শূন্যতায় ভুগে এরই মধ্যে ২৭ শিশুসহ ৩১ জনের মৃতু্য হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক গত সপ্তাহে বলেছিলেন, 'গাজায় ক্ষুধা, অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি মানবিক ত্রাণ ও বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশের বিষয়ে ইসরাইলের ব্যাপক বিধিনিষেধ, জনসংখ্যার অধিকাংশের বাস্তুচু্যতি আর এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করার ফল।' আন্তর্জাতিক আদালত তুর্কের এসব মন্তব্যের কথাও উলেস্নখ করেছে।
আদালত বলেছে, ইসরাইলকে অবশ্যই জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিষেবাগুলো ও মানবিক ত্রাণ সহায়তার বাধাহীন প্রবাহ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে জাতিসংঘের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর সব পদক্ষেপ নিতে হবে।' যেসব সহায়তা সবচেয়ে বেশি দরকার, তার মধ্যে খাদ্য, পানি, বিদু্যৎ, আশ্রয় ও পোশাকের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি পণ্য ও ওষুধ আছে বলে জানিয়েছে আইসিজে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, 'ইসরাইলকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, তাদের সামরিক বাহিনী গণহত্যা ঘোষণার অধীনে গাজায় ফিলিস্তিনিদের কোনো অধিকার লঙ্ঘন করে এমন কোনো কাজ করবে না।'
বিচারকরা আরও বলেছেন, 'স্থল ক্রসিং পয়েন্টের সক্ষমতা এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ খোলা রেখে' মানবিক সহায়তার প্রবেশ বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া ইসরাইল কীভাবে এই রায় কার্যকর করেছে, তা বিস্তারিতভাবে জানাতে আগামী এক মাসের মধ্যে দেশটিকে (ইসরাইলকে) একটি প্রতিবেদন দাখিল করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অবশ্য আদালতের এই আদেশের বিষয়ে ইসরাইলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে চলা ইসরাইলের অবিরাম হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩২ হাজার ৫৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হামাস শাসিত ভূখন্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
উলেস্নখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।