গাজায় মানবিক বিপর্যয় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে পরিণত হচ্ছে। জাতিসংঘ সমর্থিত একটি প্রতিবেদনে দেওয়া পরিসংখ্যানে এমন তথ্যই জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের শীর্ষ মানবাধিকার কর্মকর্তা ভলকার তুর্ক বৃহস্পতিবার ইসরাইলকে উলেস্নখযোগ্য দোষারোপ করেছেন। ইসরাইল গাজায় যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করছে বলে 'সম্ভাব্য' প্রমাণ রয়েছে বলেও জানান তিনি। জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার তুর্ক জানিয়েছেন, ইসরাইলের এই অভিপ্রায় প্রমাণিত হলে তা হবে যুদ্ধাপরাধ। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিদারুণভাবে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বোঝাই লরিগুলোকে রাফাহ সীমান্তে দাঁড় করিয়ে রেখেছে ইসরাইল। তলস্নাশির নামে দীর্ঘ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শেষ করে তারপর একটি লরি গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে একটি একটি করে ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়ায় ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন দেশকে। ত্রাণের পর্যাপ্ত সরবরাহের অনুপস্থিতি জর্ডান, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যসহ অন্য দেশগুলোকে আকাশ থেকে প্যারাসু্যটের মাধ্যমে ত্রাণ ফেলতে বাধ্য করেছে।
জেনেভা থেকে একটি সাক্ষাৎকারে তুর্ক জানিয়েছেন, প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ইসরাইল সাহায্য সরবরাহের গতি কমিয়ে দিচ্ছে বা আটকে রেখেছে। তিনি বলেন, 'আমার সব মানবিক সহকর্মীরা আমাদের প্রচুর লাল ফিতা থাকার কথা বলেছেন। বাধা রয়েছে। বাধা রয়েছে... ইসরাইলকে একটি উলেস্নখযোগ্য উপায়ে দোষ দেওয়া হচ্ছে।'
দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর বুলডোজার দিয়ে চাপা
এদিকে, গাজা উপত্যকায় নিরস্ত্র দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে বুলডোজার দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বালু চাপা দিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। ভয়াবহ এ ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম 'আল-জাজিরা'। ওই দুইজনের মধ্যে একজন তখন সাদা কাপড় ওড়াচ্ছিলেন। অর্থাৎ, তিনি আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও খুব কাছ থেকে গুলি করে ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা।
ঘটনাটি ঘটেছে গাজা সিটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নাবলুসিতে। নৃসংস হত্যার শিকার ওই ফিলিস্তিনিরা আল-রশিদ সড়ক দিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত নিজ বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। তখনই ইসরাইলি সেনাদের বর্বরতার মুখে পড়েন তারা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়ার পরই দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে হত্যার ভিডিও সামনে এলো। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তি ইসরাইলি সেনাদের কাছে যাচ্ছেন। তার হাতে সাদা কাপড় ছিল। অপরজন অন্যদিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পুরো সময় তিনি সাদা কাপড় তুলে রেখেছিলেন। যে ব্যক্তি অন্যদিকে যাচ্ছিলেন, তার কাছে যায় ইসরাইলিদের একটি সাঁজোয়া যান। সেখান থেকে তাকে গুলি করা হয়। এরপর সঙ্গে সঙ্গে বালুতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। গুলি করে হত্যার পর বুলডোজার দিয়ে দুইজনের মরদেহ দ্রম্নত সময়ের মধ্যে বালুতে পুঁতে ফেলা হয়। তবে বুলডোজার দিয়ে মরদেহগুলো এমনভাবে নাড়ানো হচ্ছিল যেন এগুলো কোনো পশুপাখির মরদেহ।
এই ঘটনাকে 'নৃসংস যুদ্ধাপরাধ' হিসেবে অভিহিত করেছে 'দ্য কাউন্সিল অব আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স' (সিএআইআর)। সংস্থাটি বলেছে, ইসরাইলি সেনারা খেয়ালখুশিমতো ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে এবং মরদেহগুলোর সঙ্গে এমন আচরণ করেছে যেন এগুলো 'ময়লা'।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, এটা ইসরাইলি বাহিনীর ফ্যাসিবাদ এবং অপরাধের মাত্রার আরও একটি প্রমাণ, যা জায়নবাদী আচরণকে পরিচালিত করে।
গাজায় নিহত প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি বাহিনীর অবিরত হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ৭৫ হাজার। গাজায় ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতের সর্বশেষ সংখ্যা উলেস্নখ করে উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি আগ্রাসনে সর্বশেষ একদিকে গাজায় আরও ৭৬ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ৩২ হাজার ৪৯০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৮৮৯ জন ফিলিস্তিনি। অনেক ভুক্তভোগী এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
গাজায় ইসরাইলের টানা ৪৭ দিনের হামলার পর গত বছরের ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ওই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করে কাতার, মিসর ও আমেরিকা। এরপর দুই দফায় মোট তিন দিন বাড়ানো হয় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ। সাত দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হতে না হতেই আবারও গাজায় আবার হামলা শুরু করে ইসরাইল। এর পাশাপাশি স্থল অভিযানও চালানো হচ্ছে।