আজকের যায়যায়দিন

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তার বিশ্বাস গাজায় ইসরাইল গণহত্যা চালিয়েছে। জেনিভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে বিশেষজ্ঞ ফ্রাঞ্চেস্কা আলবানিজের এ নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন।

তবে ইসরাইল এরই মধ্যে প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত একে গণহত্যা বিষয়ক কনভেনশনের আপত্তিকর বিকৃতি এবং 'বাস্তবতার অশ্লীল বিকার' বলে সমালোচনা করা হয়।

গাজায় যুদ্ধ থামানোর পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকদের আরও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ইসরাইলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকার মধ্যে গণহত্যা নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে।

গণহত্যা সুনির্দিষ্ট একটি আইনি পরিভাষা। আলবানিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর কিছু বৈশিষ্ট্য পূরণ হয়েছে। অর্থাৎ গাজায় চালানো গণহত্যামূলক কার্যকলাপ 'গণহত্যা' নির্ধারণের মাত্রায় পৌঁছেছে এমনটি বিশ্বাস করার যৌক্তিকতা আছে।

বিবিসি জানায়, বিশেষজ্ঞ আলবানিজ তার 'অ্যানাটমি অব এ জেনোসাইড' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের একটি গোটা গোষ্ঠী হিসেবে কিংবা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায় নিয়ে কাজ করেছে। যেটি গণহত্যা কনভেনশনের মূল বৈশিষ্ট্য।

আলবানিজ বিশেষত, জাতিসংঘ গণহত্যা কনভেনশন (জেনোসাইড কনভেনশন) আইনের তিনটি ধারা ইসরাইল লঙ্ঘন করেছে বলে উলেস্নখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে- গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা; শারীরিক ও মানসিকভাবে গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর ক্ষতি করা এবং গোষ্ঠীর অস্তিত্ব সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করতে হিসাব-নিকাশ করে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের জীবনাচারের ওপর আঘাত হানা।

গাজায় ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গাজার জনাকীর্ণ এলাকাগুলোতে বোমা হামলা এবং ত্রাণ প্রবেশে বাধা (যার কারণে জাতিসংঘের ভাষ্যমতে গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে)- এসবই একটি গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ের প্রমাণ বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করেছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আলবানিজ।

বহু নামকরা জাতিসংঘ ত্রাণ সংস্থাই সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, গাজার কোনো জায়গা নিরাপদ নয়। সেখানকার মানুষজন এখন প্রাণীকে খাওয়ানোর খাবার খাচ্ছে কিংবা ঘাস খাচ্ছে। শিশুদের অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই চিকিৎসা করা হচ্ছে।

সব ত্রাণ সংস্থাই বলেছে, গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিচ্ছে ইসরাইল। ত্রাণ সরবরাহে জাতিসংঘ দেরি করছে বলে ইসরাইলের তোলা অভিযোগ নিয়ে সন্দিহান অনেক দেশই।

তারপরও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ তার প্রতিবেদনে যে ভাষা ব্যবহার করেছে তা হয়তো অনেকেই পছন্দ করবে না। কিন্তু প্রতিবেদনে তিনি যা বলেছেন তাতে যুদ্ধে ইসরাইলকে তাদের আচরণ পরিবর্তন করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপে নতুন মাত্রা যোগ হবে।