জান্তা হটাতে তীব্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। তাদের রুখতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন জান্তা। এরই মধ্যে অনেক ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার দুই দিনে কাচিন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে অন্তত ৯টি ঘাঁটি কেড়ে নেওয়ার দাবি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী 'কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি' (কেআইএ) এবং এর মিত্ররা। কাচিনের ওয়াইংমও ও মমৌক শহরে এসব ঘাঁটি অবস্থিত। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, ইরাবতী
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম 'ইরাবতী'র খবরে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি, পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ), আরাকান আর্মি ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী যৌথভাবে আক্রমণ চালিয়ে নাফাও এবং পাজাও বাম গ্রামের একটি সেনাঘাঁটি দখল করে নিয়েছে।
কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি জানিয়েছে, পাজাও বাম গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী লিয়াজা শহরের মাঝামাঝি আরও অন্তত পাঁচটি জান্তাঘাঁটি দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। গত বৃহস্পতিবার নুমলাং গ্রামে অবস্থিত ৪৩৮-লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর ও মোমাউক টাউনশিপের নাউং কাউন গ্রামের ৬১৬ আর্টিলারি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটি দখল করে বিদ্রোহীরা।
এ ছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক মিতকিয়ান-ভামোর দায়িত্বে নিয়োজিত জান্তা বাহিনীর ৪৩৮-ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটিও দখল করে নিয়েছে। চলতি সপ্তাহের শনিবার সকালে লিয়াজা শহরের অবস্থিত কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মির সদর দপ্তর থেকে জান্তা বাহিনীর ৩৭০ আর্টিলারি ব্যাটালিয়নকে হটিয়ে দেয় বিদ্রোহীরা। বিগত দুই দশক ধরে কাচিন বিদ্রোহীদের হেডকোয়ার্টারটিকে ঘিরে রেখেছিল জান্তা বাহিনী।
কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি এবং এর মিত্রদের দাবি, তারা গত ১৬ দিনে প্রায় ৫০টি জান্তাফাঁড়ি দখল করেছে, যার মধ্যে তানাই, এইচপাকান্ট, সুমপ্রাবুম, ওয়াংমাও এবং মোমাউক টাউনশিপের ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর রয়েছে। কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি জানিয়েছে, তাদের ছয়জন যোদ্ধা নিহত এবং ১০ জন গুরুতর আহত হয়েছে। লড়াইয়ে অসংখ্য জান্তা সেনা নিহত এবং কয়েকশ' সেনা আত্মসমর্পণ করেছে বলে দাবি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।
ইরাবতীর খবরে বলা হয়েছে, কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি পরে দক্ষিণ কাচিন রাজ্যের রাজধানী ভামোকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে, সেখানে জান্তা বাহিনীর অপারেশন কমান্ড ২১ অবস্থিত।
২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট 'পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স' (পিডিএফ)। পিডিএমভুক্ত তিন গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং তা'আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই তিন গোষ্ঠী একত্রে 'থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স' নামেও পরিচিত।
গত প্রায় চার মাসের সংঘাতে মিয়ানমারের অন্তত ৪০টি শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ শান প্রদেশসহ অন্তত পাঁচটি প্রদেশ দখল করে নিয়েছে পিডিএফ।
২০২১ সালের ১ ফেব্রম্নয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে ক্ষমতাচু্যত করে ক্ষমতা দখল করে। এরপরই দেশটিতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ দমনে নৃশংস পদ্ধতি বেছে নেয় জান্তা। তাদের নিপীড়ন-নির্যাতন ও হামলায় অন্তত সাড়ে চার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।