মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস

গাজায় যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই

রাফাহতে রাতভর বিমান হামলা আমেরিকা কি ইসরাইল-গাজা নীতি বদলাচ্ছে?
যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলা -ফাইল ছবি

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের গাজায় 'অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির' দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস হলেও যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। ইসরাইলি সেনারা মঙ্গলবারও গাজা উপত্যকায় হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করেছে। বিমান হামলা চালিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৯৩ জনের বেশি। ইসরাইল বলছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হওয়া সত্ত্বেও গাজায় হামলা বন্ধ করবে না তারা। ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরেল কাৎজ এই তথ্য জানিয়েছেন। 'এক্সে' কাৎজ তার অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে বলেন, 'ইসরাইল যুদ্ধবিরতি করবে না। আমরা হামাসকে ধ্বংস করব এবং সব বন্দিদের ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।' তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, ডিডবিস্নউ নিউজ

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, সোমবার সারারাত ইসরাইলি যুদ্ধবিমানের বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত হয়েছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের বেশ কিছু এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, রাফাহ নগরীতে বোমা বর্ষণ করেছে ইসরাইলের যুদ্ধবিমান। এতে একটি আবাসিক ভবনে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও কাছের খান ইউনিস এবং গাজা সিটিতেও ইসরাইল হামলা চালাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩২ হাজার ৪১৪ জনে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭৪ হাজার ৬৯৪ জন মানুষ। আর ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মূলত ইসরাইলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

এদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মঙ্গলবার বলেছে, ইসরাইল হামাসের যুদ্ধবিরতির দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস হয়। প্রস্তাবে নিঃশর্তে সব জিম্মি মুক্তির আহ্বানও জানানো হয়। আমেরিকা এবার ভেটো না দিয়ে বরং ভোটদানে বিরত থাকার মাধ্যমে তার আগের অবস্থান পরিবর্তন করার পর এ প্রস্তাব পাস হয়েছে। গাজায় গত বছর অক্টোবরে যুদ্ধের শুরু থেকেই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো নিয়ে একমত হওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অচলাবস্থা বিরাজ করছিল।

আমেরিকা গাজায় যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়ে এর আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আনা একের পর এক প্রস্তবনার বিরোধিতা করেছে। ভোটাভুটিতে ভেটো দিয়ে মিত্র ইসরাইলের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে তারা। কিন্তু সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে আনা প্রস্তাবনায় আমেরিকা ভোটদানে বিরত থেকে মিত্র ইসরাইলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ারই ইঙ্গিত দিয়েছে। ওদিকে, ইসরাইলও আমেরিকার এই অবস্থান পরিবর্তনের প্রতিবাদ জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসে চলতি সপ্তাহে ইসরাইল তাদের প্রতিনিধি দলের নির্ধারিত সফর বাতিল করেছে।

ওদিকে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি আহ্বানে প্রস্তাব পাসের পর কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে হামাস জানিয়েছে, তারা এখনো গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও তাদের ভূখন্ড থেকে পুরোপুরি ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে অটল।

আমেরিকা কি ইসরাইল-গাজা

নীতি বদলাচ্ছে?

গাজা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে আমেরিকা ভেটো না দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি তারা ইসরাইল-গাজা নীতি বদলাচ্ছে? গাজায় যেভাবে বেসামরিক মানুষের মৃতু্য হচ্ছে, তা নিয়ে আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল আমেরিকা। কিন্তু জাতিসংঘে গাজা সংঘর্ষ নিয়ে দেশটি সব সময়ই ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর আগেও নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় সংঘর্ষ-বিরতি নিয়ে প্রস্তাবনা এসেছে। কিন্তু আমেরিকা তাতে ভেটো দিয়েছে। রাশিয়াও একবার প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। কিন্তু সোমবার যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, আমেরিকা সেই ভোটে অংশ নেয়নি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর অর্থ, আমেরিকা চেয়েছে প্রস্তাব গৃহীত হোক। তাই তারা ভোটে অংশ নেয়নি।

এদিকে, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, আমেরিকা গাজা নিয়ে তাদের অবস্থান বদলে ফেলেছে, এমনটা ভাবার কারণ নেই। তারা ভোটে অংশ নেয়নি, কারণ প্রস্তাবে হামাসের যথেষ্ট বিরোধিতা করা হয়নি। তবে প্রস্তাবে পণবন্দিদের ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও তার সঙ্গে সংঘর্ষ-বিরতির দাবি মেলানো হয়নি। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি সবাই হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মনে করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে