ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে দিলিস্নর মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে কার্যত ভাগ হয়ে পড়েছে বিজেপি। তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ
গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকা অংশের মতে, এই গ্রেপ্তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদি সরকারের লড়াইকে শক্তিশালী করেছে। কঠোর বার্তা দেওয়া গেছে গোটা দেশকে। কিন্তু, অন্য শিবিরের যুক্তি, কেজরির গ্রেপ্তার নিয়ে দিলিস্নর বাইরে বিজেপির রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ বিশেষ নেই। বরং কিছুদিন আগেও যে 'ইনডিয়া' জোটকে যথেষ্ট এলোমেল দেখাচ্ছিল, কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের ঘটনার পর তারাই নতুন অস্ত্র পেয়ে একাট্টা হয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে। সেই 'ঐক্যের' প্রভাব অন্য রাজ্যেও ভোগাতে পারে বিজেপিকে। এ সময় কেজরির পক্ষে সহানুভূতির হাওয়া ওঠা অবশ্যই কাম্য নয় বিজেপির।
পদে থাকা অবস্থায় প্রথমবার কোনো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে দিলিস্নতে গ্রেপ্তার হন কেজরিওয়াল। আদালতে 'এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট' (ইডি) দাবি করেছে, দিলিস্নর আবগারি কেলেঙ্কারিতে কেজরিওয়ালই ছিলেন হোতা। তদন্তে পাওয়া গেছে, হাওয়ালার (হুন্ডি) মাধ্যমে টাকা লেনদেনে দিলিস্নর মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন মধ্যস্থতাকারী। বিজেপি নেতাদের একাংশ এ কারণেই কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে তুলে ধরার পক্ষে। তাদের মতে, বিশেষ করে কংগ্রেস, তৃণমূল, আরজেডির মতো দলগুলো কীভাবে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কেজরির পাশে দাঁড়িয়েছে, গোটা ভারতের মানুষের সামনে সেই প্রচারকে তুলে ধরা গেলে বিজেপিরই লাভ।
কিন্তু এই গ্রেপ্তারকে দিলিস্নবাসী কী ভাবে নেবে, তা নিয়ে বিজেপিরই আরেক অংশ দোলাচলে। কারণ বিগত ভোটগুলোতে দিলিস্নবাসীর দ্বৈত মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। লোকসভায় তারা বিজেপিকে সব আসনে জেতালেও বিধানসভায় ঢেলে ভোট দিয়েছেন আপ-কে। সম্প্রতি পৌর ভোটেও জিতেছে আপ। আপের আমলে দিলিস্নর নাগরিক পরিষেবায় উন্নতি হয়েছে চোখে পড়ার মতো। ফলে দিলিস্নতে আপের পক্ষে যে বিপুল জনসমর্থন রয়েছে, তা অস্বীকারের করার উপায় নেই।
ফলে আশঙ্কা থাকছে, বিরোধীরা এ ঘটনাকে তাদের তথা কেজরির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে ভোট প্রচারে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলে দিলিস্নসহ ভারতের অন্যত্র সমস্যায় পড়তে হবে বিজেপিকে। এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে থাকা গোষ্ঠীর মতে, কেজরিওয়ালকে জেলে ঢোকানোয় লাভ মিলবে কেবল দিলিস্নতে। কিন্তু গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্তকে মোদি সরকারের ফ্যাসিবাদী মনোভাবের পরিচয় বলে একজোট হয়েছেন বিরোধীরা। দিলিস্নর রাজনীতিতে কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরোধিতা করে ক্ষমতায় এসেছিল আপ। তা সত্ত্বেও শত্রম্নতা ভুলে দুই শিবির বন্ধুতে পরিণত হয়েছে, যা আগামীতে বিজেপিকে বিপদে ফেলতে পারে।
প্রশ্ন হলো, প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে পা ফেলার পক্ষপাতী বিজেপি কি তা হলে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনতার নার্ভ (স্নায়ু) বোঝার রাস্তায় হাঁটেনি? কেজরি গ্রেপ্তার হলে দলের ক্ষতি না লাভ, তা না মেপেই কি তাড়াহুড়া করে পদক্ষেপ করা হলো? অনেকের মতে, গ্রেপ্তারের এই সিদ্ধান্ত 'হঠাৎ' করে নেওয়া হয়েছে বলে মনে হলেও, আসলে এর পরিকল্পনা হয়েছে এক বছর আগে থেকে। আবগারি দুর্নীতিতে মণীশ সিসৌদিয়াকে এক বছর আগে গ্রেপ্তার করে ইডি। সেই সময় থেকেই হিসাব কষা শুরু করে গেরুয়া শিবির। দফায় দফায় কেজরিওয়ালকে যে সমন পাঠানো হচ্ছিল, তাতে আপ সমর্থকদের মধ্যে কতটা প্রভাব পড়ে, তারা কতটা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে, সেই দিকে কড়া নজর রাখছিল বিজেপি। আপের দুর্নীতি নিয়েও প্রচার জোরদার হয়। তাই সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ তো দূরে থাক মণীশ সিসৌদিয়ার গ্রেপ্তারে দিলিস্নবাসীর মধ্যে সেভাবে আলোড়ন ফেলতেই পারেনি, যা বিজেপিকে সাহস জোগায় কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারি করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে।