রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় দর্শকে ঠাসা কনসার্ট হলে ঢুকে শুক্রবার এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে বন্দুকবাজের দল। দেশটির রাজধানীতে কনসার্ট উপভোগ করতে যাওয়া লোকজনের ওপর এই আকস্মিক হামলায় হতবিহ্বল মস্কোবাসী। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এখন পর্যন্ত মৃতু্য হয়েছে কমপক্ষে ১৩৩ জনের। আহত দেড় শতাধিক। কিন্তু এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বারবার জঙ্গি হামলার কবলে পড়েছে রাশিয়া। গত ২৫ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। সেদিকেই একটু নজর বুলিয়ে নেওয়া যাক। তথ্যসূত্র : এএফপি
১৯৯৯ সালের হত্যাকান্ড
সেদিন ছিল ১৩ সেপ্টেম্বর। ওইদিন সকালে দক্ষিণ-পূর্ব মস্কোর একটি আটতলা ভবনে বোমার বিস্ফোরণ হয়। এতে নিহত হন ১১৮ জন। কেবল ওই একটিই হামলা নয়, এর দুই সপ্তাহের মধ্যে মস্কো ও দক্ষিণ রাশিয়ায় সব মিলিয়ে পাঁচটি বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। প্রাণ হারান ২৯৩ জন। হামলাগুলোর জন্য মস্কো প্রধানত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর ককেশাসের চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' বিদ্রোহীদের দায়ী করে। প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন ওই হামলাকে চেচনিয়ায় বিদ্রোহ দমনে পরিচালিত অভিযানের পক্ষে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করেন।
২০০২ সালে থিয়েটারে জিম্মি
ওই বছরের ২৩ অক্টোবর মস্কোর দুবরোভকা থিয়েটারে ঝোড়ো অভিযান চালায় চেচনিয়ার স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের একটি দল। দলটির ২১ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী সদস্য অনুষ্ঠান চলার সময় থিয়েটারে ৮০০ জনের বেশি দর্শক-শ্রোতাকে জিম্মি করে। জিম্মি নাটক অবসানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দুই দিন ও তিন রাত চলে দর কষাকষি। তাতে সমাধান না হলে জিম্মিকারীদের অচেতন করতে থিয়েটারের ভেতর বিশেষ গ্যাস ছড়িয়ে দেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর সেখানে অভিযান চালান। এ ঘটনায় ১৩০ জিম্মি মারা যায়। তাদের অধিকাংশের মৃতু্য হয় দম বন্ধ হয়ে।
২০০৩ সালে রক কনসার্টে হামলা
দুবরোভকা থিয়েটারে জিম্মি নাটক অবসানের পরের বছর ২০০৩ সালের ৫ জুলাই মস্কোর কাছে তুশিনো বিমানঘাঁটিতে একটি রক কনসার্টে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় দুই নারী। রাশিয়া তাদের চেচেন বিদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে। আত্মঘাতী ওই হামলায় ১৫ জন নিহত ও ৫০ জনের মতো আহত হন। বার্ষিক ওই উৎসবে রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড দলগুলো অংশ নিয়েছিল। তাতে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ২০ হাজার ব্যান্ড সংগীতপ্রেমী।
২০০৪ সালে মস্কোর পাতালরেলে বোমা হামলা
এক বছর পর ২০০৪ সালের ৬ ফেব্রম্নয়ারি সকালের ব্যস্ত সময়ে মস্কোর পাতাল রেলপথে (সাবওয়ে) একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় স্বল্পপরিচিত এক চেচেন গোষ্ঠী। এতে ৪১ জন নিহত হন।
২০১০ সালে মেট্রোয় আত্মঘাতী হামলা
ওই বছরের ২৯ মার্চ। মস্কোর পাতালপথে দুটি হামলা চালায় দুজন আত্মঘাতী নারী। হামলায় ৪০ জন নিহত হন। এর একটি হামলা চালানো হয় এফএসবি গোয়েন্দা সার্ভিসের সদর দপ্তরের কাছে লুবিয়াংকা স্টেশন লক্ষ্য করে। এই দুই নারী হামলাকারী উত্তর ককেশাসের বিক্ষুব্ধ দাগেস্তান অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন বলে পরে জানা যায়। হামলার দায় স্বীকার করেন চেচেন স্বাধীনতাকামীদের একটি গোষ্ঠী 'দ্য ককেশাস আমিরাত'-এর নেতা দোকু উমারভ।
২০১১ সালে মস্কো বিমানবন্দরে হামলা
২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি ছিল মস্কোবাসীর জন্য আরেকটি রক্তাক্ত দিন। সেদিন মস্কোর দোমোদেদোভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগমনী হলে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় এক ব্যক্তি। তাতে ৩৭ জন নিহত হন। ওই হামলারও দায় স্বীকার করে 'দ্য ককেশাস আমিরাত'।