ইসরাইলি আগ্রাসন
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়াল
আল-শিফা হাপাতালের পরিস্থিতি নরকের চেয়েও ভয়াবহ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত ইউরোপের চার দেশ
প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত সেখানে ৩২ হাজার ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৭৪ হাজার ২৯৮ জন। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার- ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর বোমায় নিহত হয়েছেন ৮২ জন এবং আহত হয়েছেন ১১০ জন ফিলিস্তিনি। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে মোট নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, শুক্রবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নিচে এখনো চাপা পড়ে আছে অনেক মৃতদেহ। এসব এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।' তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি
এর আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব দিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের ভেটোর কারণে প্রস্তাবটি পাস হয়নি। ওয়াশিংটনের দ্বিমুখী নীতি ইসরাইলের ওপর কোনো চাপ তৈরি করছে না বলে অভিযোগ করেছে মস্কো। জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, এই খসড়াটি অত্যন্ত রাজনীতিকরণ করা হয়েছে এবং এতে রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য কার্যকর সবুজ সংকেত রয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত আলজেরিয়ার দূত আমার বেন্দজামা বলেন, প্রস্তাবের পাঠ্য (টেক্সট) অপূর্ণ। তা ফিলিস্তিনিদের সহ্য করা অপরিসীম যন্ত্রণা তুলে ধরতেও ব্যর্থ। যারা বিশ্বাস করে, ইসরাইলি দখলদার শক্তি আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা বজায় রাখবে, তারা ভুল। তাদের এই কল্পকাহিনী বাদ দিতে হবে।
এদিকে, কাতারে আবারও যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিস্নংকেন বলেন, 'আমরা দ্রম্নতই চুক্তিতে পৌঁছবো। তবে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ব্যাপারে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। তবে তার এই সফর থেকে কোনো কিছুই অর্জিত হয়নি।
আল-শিফা হাপাতালের পরিস্থিতি
নরকের চেয়েও ভয়াবহ
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধরত ইসরাইলি বাহিনী গত সোমবার গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতাল এবং এর আশপাশে অভিযান চালায়। ইসরাইলি বাহিনী জানায়, হামাসের সিনিয়র অপারেটিভরা বিস্তৃত হাসপাতাল কম্পাউন্ডে অবস্থান করছিল। সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুসারে, অভিযান চালানোর পর থেকে প্রায় ১৫০ ফিলিস্তিনি যোদ্ধা নিহত ও আরও শতাধিককে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পাঁচ দিন পরও ইসরাইলি বাহিনীর পিছু হটার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
আল-শিফা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে বসবাসকারী ৫৯ বছর বয়সি মোহাম্মদ বলেন, 'প্রত্যেকেরই মৃতু্যদন্ড কার্যকর বা গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।' তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, গাজা নরকের আগুনের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। আমি আল-শিফার রাস্তায় অনেক লাশ দেখেছি। ট্যাংকগুলো হাসপাতালের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। আমি আল-শিফার পাশের একটি বাড়িতে আগুন দেখেছি।' মোহাম্মদ বলেন, অবশিষ্ট মাত্র অল্প কিছু বাসিন্দার বসবাসের আশপাশের এলাকার আল-রিমাল পাড়া ও আল-শাতি শরণার্থী শিবির ভূতের শহরে পরিণত হয়েছে।'
আল-শিফায় গত নভেম্বরে ইসরাইলের সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক ক্ষোভের জন্ম দেওয়ার পর সর্বশেষ অভিযানে নিরাপত্তার জন্য আরও বেশি সংখ্যক সেনা প্রেরণ করেছে।
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত
ইউরোপের চার দেশ
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছে ইউরোপের চার দেশ স্পেন, আয়ারল্যান্ড, স্স্নোভেনিয়া ও মাল্টা। দেশ চারটির নেতারা শুক্রবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের বৈঠকের পর যৌথভাবে এই ঘোষণা দেন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, কাউন্সিলের সমাবেশের ফাঁকে আইরিশ, মাল্টিজ এবং স্স্নোভেনিয়ান নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। তিন দেশের সঙ্গে মিলে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে স্পেন।
বৈঠকে গাজার বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব এবং সেই সঙ্গে গাজায় সাহায্যের অপর্যাপ্ত প্রবেশের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। প্রথমবারের মতো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সর্বসম্মতভাবে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেজ সাংবাদিকদের বলেন, 'সত্যি বলতে, এখনই সময়।' তিনি আরও যোগ করেন, 'গাজায় উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতির চরম অবনতি ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনির প্রতি অবিচার অসহনীয়। এটা শেষ করতে আমাদের অবদান রাখতে হবে।'
বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে আয়ারল্যান্ড বলেছে, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের একমাত্র উপায় হলো একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়ন করা। তবেই শান্তি ও নিরাপত্তায় বসবাস করতে পারবে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিরা।