ইরান থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির লক্ষ্যে পাইপ লাইনের একটি অংশ নির্মাণের জন্য আমেরিকার কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞার ছাড় নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ বলেন, 'এটি হচ্ছে পাইপ লাইনের একটি অংশ, যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরেই নির্মাণ করা হচ্ছে। সুতরাং আমরা মনে করি না এ সময়ে কোনো তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা বা ছাড় নেওয়ার প্রয়োজন আছে।' তথ্যসূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বুধবার বলেন, পররাষ্ট্র দপ্তর ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিকল্পিত পাইপ লাইন নির্মাণের বিষয়টির দিকে নজর রাখছে। তিনি প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির এক শুনানিতে বলেন, ইসলামাবাদ ইরানের সঙ্গে জ্বালানি তেলের বাণিজ্য বিষয়ে নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দেওয়ার জন্য কোনো অনুরোধ জানায়নি। লু বলেন, 'আমরা পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে আমেরিকান নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দেওয়ার কোনো ইচ্ছা প্রকাশের কথা শুনিনি, যা এ জাতীয় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন।'
গত মাসে পাকিস্তানের বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাইপ লাইনের ৮০ কিলোমিটার অংশ নির্মাণের অনুমোদন দেয়। এই ৭০০ কোটি ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরের পর বছর যে বিলম্ব হয়েছে, তাতে ইরানকে কোটি কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদান এড়াতেই পাকিস্তান এই ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ইরান দাবি করেছে, তারা ২০১১ সালেই পাইপ লাইনের ৯০০ কিলোমিটার নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে, কিন্তু পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ শুরুই করেনি। পাকিস্তান এই প্রকল্প বহুবার স্থগিত করেছে, কারণ কর্মকর্তারা এ রকম উদ্বেগের কথা উলেস্নখ করেন যে, ইরান থেকে জ্বালানি আমদানির কারণে পাকিস্তান মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারে। তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য মার্কিন ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন।
অনেক বছর ধরেই পাকিস্তানের চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ইরান পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক আদালতে নেওয়ার এবং ১৮০০ কোটি ডলার জরিমানা করার হুমকি দিয়ে আসছে। নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে শুরু করতে হবে এ রকম একটি সময়সীমা পার হওয়ার আগেই পাকিস্তানের বিদায়ী সরকার ইরানকে সবুজ সংকেত দেয়। অনুমোদিত প্রথম পর্বে পাকিস্তান ইরানের সঙ্গে তার সীমান্ত থেকে বেলুচিস্তান প্রদেশের বন্দরনগরী গোয়াদার পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করবে। পাকিস্তান গত বছর জ্বালানি আমদানির জন্য ১৭০০ কোটি ডলারের বেশি খরচ করে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে জ্বালানির মূল্য কমে যাওয়ায় এই অর্থ আগের বছরগুলোর তুলনায় কম ছিল। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার মতে, পাকিস্তানের জ্বালানি শক্তির সব চেয়ে বড় অংশ হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। আর এর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আমদানি করতে হয়।